![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_328884_1.jpg?t=1722051981)
দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাত অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে খাতটি প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ পোর্টফোলিও এবং পাশাপাশি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার গ্রাহকদের আমানতের ব্যবস্থাপনা করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় চ্যালেঞ্জ ফান্ড মবিলাইজ করা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল সংগ্রহের জন্য ব্যাংকের মতো গ্রাহক থেকে আমানত নিয়ে থাকে। আমানত সংগ্রহে গ্রাহকদের আস্থা একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। লংকাবাংলার প্রতি গ্রাহকের আস্থা আছে। এজন্য তারা এখানে আসে। যেকোনো ফাইন্যান্স কোম্পানিকেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। সেই আস্থার জায়গাটি কিন্তু খানিকটা ভিন্ন। একটা প্রতিষ্ঠানে করপোরেট সুশাসন, করপোরেট সংস্কৃতি বলে দেয় তারা কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে পরিপালন করে যদি কোম্পানি পরিচালনা করা যায় তাহলে মানুষের আস্থা প্রতিষ্ঠা কোনো কঠিন কাজ নয়। আমরা যদি সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক খাতে সেক্টরটির ভূমিকার কথা চিন্তা করি তাহলে সবাই স্বীকার করবেন যে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিগত কয়েক দশকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়নেও এগিয়ে এসেছে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ভূমিকা পালন করার দরকার ছিল তা যে অনেকাংশে পুরোপুরি সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে সেটা আমি বলব না। করপোরেট সুশাসন ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল তা হয়নি। সুতরাং এ জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের এক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। মেধাবী তরুণদের নেতৃত্বে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা বর্তমানে যে ধরনের নীতি নিয়ে আসছেন, আগামীতে তা অব্যাহত রাখা জরুরি। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকা উচিত নয়। দুটি ক্ষেত্রকেই সমানভাবে দেখতে হবে। এছাড়া ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর কস্ট লাইনগুলোকে উন্নত করা প্রয়োজন। ব্যাংকের বিবিধ ধরনের আয় রয়েছে। এনবিএফআইগুলোর কিন্তু তা নেই। যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয় তাদের একীভূতকরণের মাধ্যমে একটি কাঠামোতে আনতে হবে ও দক্ষ ব্যবস্থাপকের হাতে তুলে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের অন্যতম আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা গ্রাহকদের আস্থা ও সুনামের সঙ্গে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমানত সংগ্রহ করে যাচ্ছি। আমরা সর্বদাই গ্রাহকের সুবিধা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমাদের পণ্য ও সেবার ডিজাইন করছি। বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষের জন্য রয়েছে আমাদের বহুমাত্রিক সেবা। আমরা আমাদের ডিপোজিট সেবাগুলো সবার জন্য নিয়ে এসেছি আর আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্য আমাদের অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে আমাদেরই এ বিশাল সেবা ও পণ্যের বৈচিত্র্য রয়েছে। শিশু ও সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ইন্স্যুরেন্স সুবিধাসংবলিত ডিপোজিট সেবা যথাক্রমে প্রতিভা ও স্বস্তি নিয়ে এসেছি। আর আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের কথা চিন্তা করে আমাদের রয়েছে ‘অগ্রজ’। বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর শুরুতেই বার্ষিক ভিত্তিতে মুনাফা উপভোগের বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ ‘আর্ন ফার্স্ট’ ডিপোজিট স্কিম, দৈনিক মুনাফা সুবিধাসংবলিত বিশেষায়িত স্কীম ‘ফ্লেক্সি ডিপোজিট’। এছাড়া সুবিধাজনক ও নির্ধারিত সময়ে প্রাথমিক জমাকৃত অর্থ দ্বিগুণ অথবা তিন গুণ করার বিশেষায়িত ডিপোজিট স্কিম ‘কুইক সঞ্চয়’ নিয়ে লংকাবাংলা আছে আপনার পাশে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক জীবনের মান উন্নয়নের চেষ্টায় লংকাবাংলা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নারীদের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে লংকাবাংলা নিয়ে এসেছে নারীভিত্তিক প্লাটফর্ম ‘শিখা’। নারীদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে লাভজনক মুনাফাসংবলিত সময়োপযোগী ও বিশেষায়িত ডিপোজিট স্কিম ‘শিখা ইচ্ছে’, ‘শিখা অবিরত’, ‘শিখা সঞ্চয়’ ও ‘এসএমই শিখা প্রজ্বলন’ নিয়ে লংকাবাংলা আছে নারীদের পাশে। দেশের সব উদ্যোক্তা নারীদের জন্যও রয়েছে ‘এসএমই শিখা ইচ্ছে’, ‘এসএমই শিখা অবিরত’, ‘এসএমই শিখা সঞ্চয়’ ও ‘এসএমই শিখা প্রজ্বলন’। সম্প্রতি আমরা সিএমএসএমই গ্রাহকদের জন্য ডিপোজিট সেবা নিয়ে এসেছি। ‘এসএমই উপার্জন’, ‘এসএমই সচ্ছলতা’ ও ‘এসএমই দ্রুত সঞ্চয় ডিপোজিট স্কিম’ নিয়ে লংকাবাংলা আছে দেশের সব উদ্যোক্তা এবং উদ্যোগী মানুষের পাশে। এছাড়া আমাদের রয়েছে আরো বিভিন্ন ডিপোজিট সুবিধা। আমরা কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে আমানত সংগ্রহ করছি তা নয় আমরা করপোরেট হাউজগুলো থেকেও আমানত সংগ্রহ করে থাকি। লংকাবাংলা প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর উদযাপন করছে। ২৫ বছর ধরে দেশের জনগণের জন্য কাজ করছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সম্পৃক্ত। লংকাবাংলার অন্যতম অর্জন মানুষের আস্থা। এ আস্থা নিয়েই লংকাবাংলা তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। আগামীতে আমরা লংকাবাংলা ফাইন্যান্সকে একটা ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে দেখতে চাই। আমরা আমাদের কার্যক্রম ডিজিটাল করতে চাইছি এবং ডিজিটালাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে। ডিজিটাল আর্থিক সেবা গ্রহণের নতুন দুয়ার উন্মোচিত করতে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকরা এখন থেকে লংকাবাংলার ডিপিএস সুবিধা এবং ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবায় অন্তর্ভুক্ত করাই চুক্তিটির মূল লক্ষ্য। আমরা কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম (সিএমএসএমই) ব্যবসার জন্য প্লাটফর্মভিত্তিক ই-লোন চালু করার জন্য ডেলিভারি টাইগার ও সিএমএসএমই এবং রিটেইল গ্রাহকদের জন্য ওয়ান স্টপ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্লাটফর্ম চালু করতে ডানা ফিনটেকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা দেশের একমাত্র ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যার ক্রেডিট কার্ড সেবা রয়েছে। অর্থনৈতিক সেবা বিকাশে এসব চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা আমাদের সেবা ও পণ্যের মান দেশের মানুষকে প্রদান করার জন্য ও একটি আর্থিক পরিসেবার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ভবিষ্যতেও আমরা এ ধরনের আরো চুক্তি করব। এছাড়া নতুন ডিজিটাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে শিখা চ্যাটবট ও ফিনস্মার্ট অ্যাপ রয়েছে। আমাদের আছে দেশের সর্বাধিক পেমেন্ট পার্টনার, যাদের মাধ্যমে গ্রাহক কোনো ঝামেলা ছাড়াই তাদের লোন ইনস্টলমেন্ট, ডিপোজিট পেমেন্ট এবং ক্রেডিট কার্ড বিল দিতে পারেন খুব সহজেই। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আরটিজিএস ও বিএফটিআইএনের অধীনে নিয়ে এসেছে। এতে লেনদেনে খুব বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটেছে। এর সঙ্গে এমএফএসকে যোগ করলে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমরা পণ্য ও সেবার মান আরো উন্নত করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
খাজা শাহরিয়ার: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড