‘এক জায়গায় স্থবির হয়ে থাকিনি’

সাবিহা জামান শশী

ছবি: আরণ্যক

দেশের অন্যতম নাট্যদল আরণ্যকের ৫০ বছর পূর্তি হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। এ উপলক্ষে বছরজুড়ে ছিল তাদের নানা আয়োজন। আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের মাধ্যমে ৫০ বছর পূর্তি আয়োজনের সমাপন ঘটতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে শুরু হচ্ছে আটদিনের নাট্যোৎসব। চলবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত । 

এ আটদিনে আরণ্যকের নতুন ও পুরনো নয়টি নাটক মঞ্চস্থ হবে। সেই সঙ্গে রয়েছে বহিরঙ্গনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান। সঙ্গে সেমিনার, যন্ত্রসংগীত, প্রকাশনা উৎসবসহ নানা আয়োজন সাজিয়েছে দলটি। নাট্যোৎসবে নিয়মিত চারটি নাট্য প্রযোজনার পাশাপাশি নবরূপে মঞ্চে ফিরছে পুরনো পাঁচটি নাট্য প্রযোজনা। নাটকগুলো হলো ‘নানকার পালা’, ‘ওরা কদম আলী’, ‘ইবলিশ’, ‘সংক্রান্তি’, ‘ময়ূর সিংহাসন’, ‘রাজনেত্র’, ‘কবর’, ‘রাঢ়াঙ’, ‘কহে ফেসবুক’। উৎসবের প্রথম দিন মামুনুর রশীদের রচনায় ‘ওরা কদম আলী’ নাটকটির মঞ্চায়ন হতে যাচ্ছে শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যা ৭টায়। 

এ আয়োজন নিয়ে আরণ্যকের প্রধান মামুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন একটি বড় ঘটনা। এটা উদযাপন করতেই আমরা উৎসবের আয়োজন করছি। বেশ কয়েকটি পুরােনা নাটকও উৎসবে নতুন করে মঞ্চস্থ হবে। পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত প্রযোজনাগুলোও থাকবে।’

আরণ্যকের হাত ধরে অনেক তারকা এসেছেন। যাদের বেশির ভাগ বর্তমানে মিডিয়া অঙ্গনে আসর জমাচ্ছেন। এ নিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা আমার গর্বের বিষয় যে আমার দল থেকে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী, নির্মাতা ও রচয়িতা তৈরি হয়েছে। তাদের দেখলে অনেক সময় মনে হয়, সব চরিত্র যেন আমি নিজেই। এই ৫০ বছর পূর্তির সমাপনী আয়োজনে আরণ্যকের সব সদস্য অংশ নিচ্ছেন।’

আরণ্যক শুরুর ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘নাটকের প্রতি ভালো লাগা থেকেই শুরু করেছিলাম। এরপর নাটকের উন্নয়নের ভাবনা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। কখনো এক জায়গায় স্থবির হয়ে থাকিনি। এভাবেই যাচ্ছে সময়।’ 

আরণ্যকের এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন নাট্যদলের নবীন ও প্রবীণ সদস্যরা। চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, জয়রাজ, ফজলুর রহমান বাবুর মতো অভিনেতারা অংশ নিচ্ছেন এ আয়োজনে। বিশেষ করে জনপ্রিয় অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার এ  উৎসবের একটি নাটকে অভিনয় করবেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও এ আয়োজনে অংশ নিতে উড়াল দিয়েছেন দেশের পথে। 

‘ময়ূর সিংহাসন’ ও ‘রাঢ়াঙ’-এ অভিনয় করবেন তমালিকা কর্মকার। অন্যদিকে রাঢ়াঙ নাটক নিয়ে মঞ্চ মাতাবেন চঞ্চল চৌধুরীও। 

‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণীসংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার’ স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে দলটি। মঞ্চনাটক, পথনাটক ও মুক্ত নাটক করে নাট্যচর্চাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে দলটি।

আরণ্যকের সক্রিয় সদস্য মাহাফুজ মুন্না। এ নাট্যদলের মাধ্যমেই মিডিয়ায় যাত্রা তার। বর্তমানে মঞ্চ ও পর্দা দুই জায়গায়ই অভিনয় করছেন তিনি। আরণ্যক নিয়ে মুন্না বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে আমি আরণ্যকের সঙ্গে আছি। আমার দেখা প্রথম মঞ্চনাটক রাঢ়াঙ। থিয়েটার ওয়ার্কশপ করার পর আমি আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই। এটা আমার জন্য অসাধারণ অনুভূতি ছিল। এখনো অভিনয়ের সঙ্গেই আছি। আমার স্বপ্ন একজন ভালো অভিনেতা হওয়া। এ স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি আরণ্যকের সঙ্গে।’ 

নবীন ও প্রবীণ তারকা সবার অংশগ্রহণেই বিভিন্ন নাটক মঞ্চায়ন করছে আরণ্যক। নতুন আর পুরনোর সমন্বয়ে মঞ্চে কাজ করার অনুভূতি নিয়ে জানতে চাইলে মাহাফুজ মুন্না বলেন, ‘চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবুর মতো সিনিয়ররা যেখানে বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, তাদের সঙ্গে মঞ্চে যখন পারফরম্যান্স করি, অসাধারণ লাগে। বিশ্বাস হয় না যে এত গুণী অভিনেতার সঙ্গে এক মঞ্চে অভিনয় করছি। তাদের কাজ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। আরণ্যকে ভালোবাসার লেনদেন রয়েছে।’ 

১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে নাট্যচর্চায় যাত্রা করে আরণ্যক নাট্যদল। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি দিয়ে প্রথম মঞ্চে আসে তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন