হাবিপ্রবিতে দেশের প্রথম ভেটেরিনারি অলিম্পিয়াড

ফিচার প্রতিবেদক

ক্যাম্পাস হঠাৎ প্রাণী চিকিৎসকদের পদচারণায় মুখর। সাদা অ্যাপ্রোন পরে দলবেঁধে এগিয়ে আসছেন টিএসসির সম্মুখে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ একটি শাখায় দক্ষ। তারা আয়োজন করেছেন দেশের প্রথম ভেটেরিনারি অলিম্পিয়াড। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ভেটেরিনারি অলিম্পিয়াড ২০২২। ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৬৬টি দলের ৮৩০ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ভেটেরিনারি অলিম্পিয়াড। সবার প্রত্যাশা, ভেটেরিনারি শিক্ষাকে আরো যুগোপযোগী আধুনিক করতে এই অলিম্পিয়াড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতেও কাজ করবে। আমাদের দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক অনেক প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু ভেটেরিনারি অলিম্পায়াড এই প্রথম। বিজ্ঞানচর্চা আরো নতুন একটি মাইল ফলক পেল। প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে তেমনি নিজেদের ট্যালেন্ট যাচাই করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ভেটেরিনারি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি নতুন গতির সঞ্চার করেছে এই অলিম্পিয়াড। ন্যাশনাল লেভেলে প্রতিযোগিতা করে বিজয়ীরা অংশ নেবেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়।

অলিম্পিয়াডে প্রথম পর্বে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। অনলাইনে গুগল ফর্মের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৪০টি এমসিকিউর ৮০ নম্বরের পরীক্ষা। দ্বিতীয় পর্ব ছিল কিউ কার্ড পরীক্ষা। এখানে মিনিট সময়ের ব্যবধানে পাঁচটি করে কার্ড দেয়া হয় প্রতিটি টিমকে। কার্ডে ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস প্রশ্ন থাকে এবং সেখানেই উত্তর লিখে জমা দিতে হয়। নম্বর ১০। পরীক্ষার তৃতীয় পর্বের নাম গেম পর্ব। গেম সেশনে প্রতি টিমকে পিংপং বল খেলানো হয়। এবং সবার শেষে এক্সট্রা অ্যাক্টিভিটিস হিসেবে টেবিলে কিছু সাজানো ছবি রাখা হয় সেগুলো একবার দেখে এসে উত্তর করে জমা দিতে হয়। প্রতিটি সেগমেন্ট পুরো বাংলাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় জুমে একে অন্যের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। অলিম্পিয়াডে প্রতিটি ক্যাম্পাস থেকে বিজয়ী টিম নিয়ে আগামী ১৬ নভেম্বর কক্সবাজারে হোটেল রয়্যাল টিউলিপে ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে।

জাতিসংঘের এফএওর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আব্দুন নাকিব জিমি বলেন, ভেটেরিনারি শিক্ষাকে বাংলাদেশে প্রসারিত করা এবং গুরুত্ব বোঝাতে এই ভেটেরিনারি অলিম্পিয়াডের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রান্তিক পর্যায়ে নানা সংকটের কথা জানালেন হাবিপ্রবি ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক . তাহেরা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, আমাদের একটি সরকারি নীতিমালা থাকা দরকার। ভেটেরিনারি সার্জেন্টরা যখন গ্রামে বদলি হন তখন দেখা যায় কম্পাউন্ডাররাই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। মেডিসিন যা দরকার তার পর্যাপ্ত সাপ্লাই থাকে না গ্রামে। যথার্থ চিকিৎসা হয় না। ভেটেরিনারি সার্জেন্ট যারা আছেন তারা নিজেদের কাজটা অনেক সময় ঠিকভাবে করছেন না। দেখা যায়, গ্রামে ভেটেরিনারি সার্জেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাক্তার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এসব মনিটরিংয়ের জন্য একটি শক্তিশালী নীতিমালা দরকার। সরকারের আরো সুনজর দেয়া দরকার। সেবার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কৃষকের কাছে একটি গরু বা ছাগল তার একমাত্র অবলম্বন। হাবিপ্রবির ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থী মো. মহিদুল ইসলাম জানান, এটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন একটা অভিজ্ঞতা ছিল।

ধরনের অলিম্পিয়াড আমাদের ভেটেরিনারি সেক্টরকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে, প্রতিটি ভেট শিক্ষার্থীকে একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের পাশাপাশি লিডিং পারসন হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আমরা বহির্বিশ্বের ভেটেরিনারিয়ানদের সঙ্গে সমানতালে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হব।

অলিম্পিয়াডে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক . তাহেরা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক . মো. সাইফুর রহমান, আইআরটির পরিচালক অধ্যাপক . এসএম হারুন উর রশীদ, আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক . বিকাশ চন্দ্র সরকার, জনসংযোগ প্রকাশনা শাখার পরিচালক অধ্যাপক . শ্রীপতি সিকদার, প্রক্টর অধ্যাপক . মো. মামুনুর রশিদ, ছাত্র পরামর্শ নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক . ইমরান পারভেজ, এফএওর প্রতিনিধি শিক্ষার্থীরাসহ অন্যান্যরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন