হলিউডের অধিকাংশ সিনেমার শুটিং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে

ফিচার ডেস্ক

হলিউডের সিনেমার পরিচালকরা শুটিং করতে গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া তত্সংলগ্ন দেশগুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন। মূলত হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্রের মতো মধ্য ইউরোপের দেশগুলোয় শুটিং খরচ বেড়ে গিয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রিস, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়ার মতো দেশগুলোয় শুটিং করতে নানা আকর্ষণীয় ছাড় দেয়া হচ্ছে। নির্মাণ ব্যয় কমাতে তাই দেশগুলোয় ছুটছেন পরিচালকরা। বাড়তি পাওয়া হিসেবে থাকছে ভূমধ্যসাগর অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের চকচকে উপকূল, কৃষ্ণ সাগরের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট নানা প্রাগৈতিহাসিক শহরের ব্যাকগ্রাউন্ড।

এক দশক আগে এইচবিও পরিচালিত গেম অব থ্রোনস সিরিজের একটি দৃশ্য ক্রোয়েশিয়ায় শুটিং হয়। তখন দেশটির দুব্রভনিক শহরটির দৃশ্যপটে রাজার অবতরণের দৃশ্য শুট করা হয়। সে সময় থেকেই ক্রোয়েশিয়া হলিউডের প্রডাকশন টিমকে আকর্ষণ করে আসছে। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের চোখ জুড়ানো দৃশ্য, দক্ষ ক্রু এবং সঙ্গে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থছাড় প্রভৃতি সুবিধা দেশটি প্রডাকশন টিমকে দিয়েছিল। ক্রোয়েশিয়ার সেবায় মুগ্ধ হয়ে পরে সাকসেশন, দ্য হুইল অব টাইম প্রভৃতি সিনেমার শুটিং হয় সেখানে। এরপর ক্রোয়েশিয়াকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রাজধানী জাগরেবভিত্তিক বিভিন্ন প্রডাকশন আউটফিট হলিউডের বিভিন্ন সিনেমার কাজে ব্যস্ত হতে শুরু করে।

শুটিংয়ের জন্য সম্প্রতি গ্রিসও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আকর্ষণীয় দেশগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশটি ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় উষ্ণ এবং নানা পুরাকীর্তি এতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে অতীতাশ্রয়ী সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশটিতে শুটিং বেশ প্রাধান্য পায়। অতিসম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ক্রাইম অব ফিউচার ট্রায়াঙ্গেল অব স্যাডনেস সিনেমা দুটির শুটিং হয়েছে গ্রিসে। শেষোক্ত সিনেমাটি পাম দো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। প্রসঙ্গে আরেকটি ছবির কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ড্যানিয়েল ক্রেইগ, এডওয়ার্ড নর্টন, জ্যানেল মোনায়ে, ক্যাথেরিন হানসহ তারকাবহুল সিনেমা হলো গ্লাস ওনিয়ন: নাইভস আউট মিস্ট্রি। শুটিং টিম সার্বিয়ায় যাওয়ার আগে টানা পাঁচ সপ্তাহ ছবিটির শুটিং হয় গ্রিসের ভূমধ্যসাগরীয় পরিবেশে।

এদিকে সার্বিয়াও বড় বাজেটের ছবির জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করেছে। ৫০ লাখ ইউরো বাজেটসম্পন্ন একটি ছবির জন্য তারা এমন প্রস্তাব দিয়েছে। গেরি ফ্লেডার পরিচালিত ট্রু হন্টিং নামের ভৌতিক ছবিটির শুটিং হয়েছে সার্বিয়ায়। ছবিটি নির্মাণে দেশটির বিভিন্ন সহযোগিতায় সন্তুষ্ট হয়ে সনি এখানে আরো শুটিং করতে উৎসাহিত বোধ করছে। হররস্কোপ নামে নতুন আরেকটি ছবির শুটিং হয়েছে সার্বিয়ায়।

রোমানিয়াও এসব থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেনি। প্রায় দুই দশক আগে গৃহযুদ্ধ নিয়ে কোটি ডলারের সিনেমা কোল্ড মাউন্টেইনের শুটিং হয়েছিল এখানেই। শুটিং স্পট হিসেবে চেক রিপাবলিকও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানেই শুটিং হয়েছিল স্পাইডার-ম্যান: ফার ফ্রম হোমের। এদিকে বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি অভিনীত হচ্ছে হরর ফিল্ম ক্রিপার্স সুপার ন্যাচারাল সিনেমা ব্যাগম্যান। এজন্য দেশটিতে ফিল্ম প্রডাকশনের জন্য উপযুক্ত স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কাজে দক্ষ কিছু টিমও রয়েছে তাদের।

মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় হলিউডের ছবির শুটিং বেড়ে যাওয়ায় দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক ভ্রাতৃত্ববোধের বিনিময় হচ্ছে। এতে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা বাড়ছে এবং পরস্পরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমছে। দেশগুলোর সমন্বয়েও বেশ কয়েকটি সিনেমার শুটিংয়ের কাজ চলছে। লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বৃহৎ পরিসরে ফিল্ম স্টুডিও নির্মাণের দিকে ঝুঁকছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন