কালবৈশাখীর আঘাতে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও গাছপালা

বগুড়ায় ঘর ও গাছচাপায় দুজনের মৃত্যু

বণিক বার্তা ডেস্ক

বগুড়া শহরের খোকন পার্কে উপড়ে পড়ে পাকুড় গাছ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

কালবৈশাখীর আঘাতে বগুড়ায় ঘর গাছচাপায় দুজন নিহত হয়েছেন। জেলা শহর উপজেলা পর্যায়ে গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল ভোর ৪টায় হঠাৎ করে বগুড়া জেলার উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে ঝড়ো বাতাস শুরু হয়। প্রায় ৩৫ মিনিট স্থায়ী ঝড়ো বাতাসে জেলা শহরের খোকন পার্কের মধ্যে একটি ২০ বছরের পাকুড় গাছ উপড়ে পড়ে। সরকারি আজিজুল হক কলেজের বেশকিছু গাছের ডালপালা ভেঙে যায়। উঠতি বোরো ধানের জমিতে পানি জমে গিয়েছে। গাছ ভেঙে বৈদ্যুতিক তারে পড়লে ভোর ৪টা থেকে বগুড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এদিকে গাছের ডাল ভেঙে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বৃকুষ্টিয়া গ্রামে আব্দুল হালিম (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ভোরের ঝড়ে একটি বড় গাছ ভেঙে আব্দুল হালিমের ঘরের ওপর পড়ে। সকালে তিনি গাছের ডাল কাটতে গেলে গাছচাপায় গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুরে তিনি মারা যান। নিহত আব্দুল হালিম শাজাহানপুর উপজেলার বৃকুষ্টিয়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে।

অন্যদিকে কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়েছে। কাহালু উপজেলার কালাই মাছপাড়ায় বাড়ির ওপর পাকুড় গাছ পড়ে ঘর ধসে মাটিচাপায় মারা গেছেন শাহিন (৪৫) নামের এক দিনমজুর। নিহত শাহিন গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী গ্রামের মৃত গুলজারের ছেলে।

বগুড়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, গতকাল ভোর ৪টায় কালবৈশাখী ৮৮ দশমিক কিলোমিটার বেগে বয়ে যায়। বগুড়া জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, ঝড়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে গাছপালা বৈদ্যুতিক লাইনের। সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এনামুল হক জানান, কিছু জমির ধান ঝড়ের কারণে হেলে পড়েছে। আর বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমেছে।

রাজবাড়ীতে কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়ায় ২০ ঘণ্টা বন্ধ ছিল রাজবাড়ী-বালিয়াকান্দি সড়কের চলাচল। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যানবাহনচালক যাত্রীকে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গতকাল সকালে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়। এতে বালিয়াকান্দি উপজেলার চরআড়কান্দি, ইকোরচর, তেঁতুলিয়াসহ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে বাড়িঘর, আম, কলা, ফসল, বিদ্যুতের খুঁটি এবং গাছপালা উপড়ে ভেঙে গেছে। ফলে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

বহরপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দরামদিয়া গ্রামের লিয়াকত সরদার বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় গতকাল সকালে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। আমাগের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। আমবাগান, লিচুবাগান, কলাবাগানের ক্ষতি হয়েছে।

তেঁতুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝড়ে বাজারে থাকা একটি বটগাছ সড়কের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে বালিয়াকান্দি-রাজবাড়ী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বেলা ১টায় গাছ কেটে সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে বিদ্যুৎ লাইনও বন্ধ ছিল।

বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বিশ্বাস বলেন, বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের চরআড়কান্দি, ইকোরচর গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর গাছপালা লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ১০ মিনিটের ঝড়ে গাছপালা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নাসরিন সুলতানা জানান, ইউপি চেয়ারম্যানদের বলেছি, তালিকা তৈরি করে জমা দেয়ার জন্য। তালিকা পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।

নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাটসহ কয়েকটি উপজেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০টি কাঁচা ঘর, গাছপালা দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হওয়া ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ায় জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জানা যায়, গতকাল সকালে হঠাৎ করে বজ সহ প্রচণ্ড বেগে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। সময় কালবৈশাখী ঝড়ে হাতিয়ার জাহাজমারা, নলচিরা ইউনিয়ন, সুবর্ণচর উপকূল কবিরহাটসহ জেলার কয়েকটি স্থানে অন্তত ৩০টি কাঁচা ঘরবাড়ি দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গাছ ভেঙে পড়ে সড়কে যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। বেশকিছু স্থানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ঝড়ে কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ি গাছপালার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। তালিকার ভিত্তিতে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে বাড়িঘর, গাছপালাসহ মাঠে থাকা পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় কয়েক দফা ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জেলার ৭০০ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান হেলে পড়েছে। পানিতে ডুবে যাওয়া এসব ধান দ্রুত কাটা না হলে ক্ষতির আশঙ্কা করেন তিনি। জেলার গড় ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হলেও শুধু পাঁচবিবি উপজেলায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়াও প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জয়পুরহাট সদরের তেঘরবিশা, খনজনপুর, কাশিয়াবাড়ী, কেশবপুর, পারুলিয়া, শ্যামপুর, বিশ্বাসপাড়া, বুলুপাড়া গ্রামসহ কালাই পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা-শিরট্টি সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, প্রচণ্ড ঝড়ে হাজীপাড়া এলাকার পুরনো বড় একটি গাছ ভেঙে বাড়ির ওপর পড়েছে। এছাড়া শতাধিক গাছপালা ভেঙে গিয়েছে। ৪০টির মতো বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেন তিনি।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বণিক বার্তার বগুড়া, রাজবাড়ী, নোয়াখালী জয়পুরহাট প্রতিনিধি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন