ডায়িং কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় ভালুকায় সুপেয় পানির সংকট

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় ২৫টি ডায়িং কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি কারখানা চালু রয়েছে। একেকটি কারখানায় প্রতিদিন ৯০০ কিউবিক মিটার (১ কিউবিক মিটার ১০০০ লিটারে) পানি ব্যবহার করা হয়। এসব পানি ভূগর্ভ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর বাইরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়ির পানিও ভূগর্ভ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। চলতি তাপপ্রবাহে পুকুর-জলাশয় শুকিয়ে অধিকাংশ সাবমার্সিবল নলকূপ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানির সমস্যায় পড়েছে। বিশেষ করে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার প্রায় গ্রামে মোটরচালিত সাবমার্সিবল পানির পাম্প বেড়ে গিয়েছে। কমেছে চাপকলের ব্যবহার। গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড তাপদাহ বয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে অধিকাংশ টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানে লোকজন ভিড় করছে টিউবওয়েলের দোকানে। অনেকে দারস্থ হচ্ছেন টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের। গত কয়েক বছর ধরে ভালুকা পৌর এলাকার বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ওপরের লেয়ারে স্থাপন করা চাপকলগুলো একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডিপসেট সাবমার্সিবল টিউবওয়েল ব্যবহার শুরু হয়েছে।

টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওপরের লেয়ারে স্থাপিত বেশির ভাগ সাবমার্সিবল পানির পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্যা সমাধানে তারা দিনরাত বাসায় বাসায় কাজ করছেন। এসব কলের কোনটায় অতিরিক্ত ১০ ফুট কোনটায় ২০ ফুট পাইপ সংযোজন করা হচ্ছে। কোথাও মোটর নিচে নামিয়ে পানির লেয়ারে স্থাপন করে পানি ওঠাতে হচ্ছে। যাদের ৮০ ফুটের নিচ পর্যন্ত পাইপ রয়েছে, তাদের পাম্পে পানি উঠছে না। আর যেসব সাবমার্সিবলের ১২০ ফুট নিচ পর্যন্ত পাইপ রয়েছে, শুধু ওইসব পাম্পে পানি উঠছে।

টিউবওয়েল মিস্ত্রিরা আরো জানান, চৈত্র মাসে খরার কারণে প্রতি বছর তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায়। তবে এ বছর তারা প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এত নিচে পানির স্তর কখনো নামেনি। এ সময় যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যেতে পারে। তখন পানির সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।

গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের পক্ষে ৪০/৫০ হাজার টাকায় একটি সাবমার্সিবল পানির কল স্থাপন সম্ভব নয়। খরা মৌসুমে এসব মানুষের খাবার পানি অন্যের বাড়ি থেকে আনতে হয়। কারণ, চাপকল কিংবা টানা কলে এখন আর পানি পাওয়া যায় না। খরার কারণে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে খাবার পানি ও কৃষিতে সেচকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভরাডোবা ইউনিয়নের চাপরবাড়ী গ্রামের হাজী নাজিম উদ্দীন খান (৯২) জানান, তাদের প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো পুকুরটি খরার কারণে এখন প্রতি বছর শুকিয়ে যায়। এতে প্রায় ১০/১৫টি পরিবারের লোকজন গোসল ও গবাদিপশু নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন।

পরিবেশবিদরা জানান, গত কয়েক বছর নির্বিচারে এ অঞ্চলের বিশাল সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। ছোট-বড় বৃক্ষ নিধনের ফলে ছায়াশূন্য মাটিতে সূর্যের তাপ বাধাহীনভাবে পড়ছে। ভরাট হওয়া পানিশূন্য পুকুর, নদী, খাল, বিলগুলো পানিশূন্য হয়ে খা-খা করছে। অন্যদিকে স্বল্পমূল্যে জলাভূমি কিনে আইন না মেনে মাটি ফেলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে তাতে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। এসব প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গভীর নলকূপ ছাড়াও কয়েকশ কারখানায় শক্তিশালী গভীর নলকূপ দিয়ে দিনরাত পানি তোলা হচ্ছে। এসব কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী পলাশ সরকার জানান, ডায়িং কারখানাগুলো ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সম্প্রতি ডাকাতিয়া ডালুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি নলকূপ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পানির স্তর অনেক নিচে চলে গেছে। আগে সরকারি টিউবওয়েলগুলোর পাইপ দেয়া হতো ৮০ ফুট, বর্তমানে ১৬০ ফুট দেয়া হচ্ছে। তবে ভালুকায় কতোগুলো সরকারি টিউবওয়েল ও পাম্প অকেজো, তা তার জানা নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন