অ্যাকশনএইডের ওয়েবিনার

জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমরা সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় যে বাজেট বরাদ্দ করা হয় তা বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় খুবই অপ্রতুল। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন লস অ্যান্ড ডেমেজের মতো বিষয়গুলো জলবায়ু বাজেটে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া নারীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বৈষম্যমূলক প্রভাব সামাজিক উন্নয়ন রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকে খর্ব করে। কার্যকর জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে অবশ্যই লৈঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। জেন্ডারভিত্তিক বাজেট নিয়ে সরকারি মন্ত্রণালয় দপ্তরের ধারণা আরো বাড়াতে হবে।

গতকাল অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত স্টেকহোল্ডার কনসাল্টেশন অন বাংলাদেশ ক্লাইমেট বাজেট (২০২১-২২) শীর্ষক এক ওয়েবিনারে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক, আলোচক, সাংবাদিক স্টেকহোল্ডাররা এসব কথা বলেন।

এই ওয়েবিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক . মিজান আর খান, মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি ফেরদৌসি বেগম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।

ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু বাজেট বিশ্লেষণের চেষ্টা করেন, যেখানে জলবায়ু ব্যয়ের প্রাসঙ্গিকতা এবং কার্যকারিতা বোঝার জন্য বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। সময় গত বছরের তুলনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের ২৫টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের জন্য শতাংশেরও কম বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট জাতীয় বাজেটের ৫৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে অপারেটিং বাজেটের অধীনে ১০ হাজার ২৮৬ কোটি উন্নয়ন বাজেটের অধীনে ১৪ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় চলতি অর্থবছরের বাজেট দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে পরিবেশ বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয় ৩৭৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৯ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা কম। তাছাড়া আগের বছরের তুলনায় বাজেটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৪২৭ দশমিক ১৯ কোটি টাকা এবং মত্স্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১১৩ দশমিক ৩২ কোটি টাকা কমেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে জলবায়ু অর্থায়ন কমে যাবে বলে আশঙ্কার কথা বলেন অধ্যাপক . মিজান আর খান। তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের ৮৫ ভাগ বরাদ্দ আসে স্থানীয় খাত থেকে, তাই স্থানীয় খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান স্থানীয় আঞ্চলিক ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করাই সমীচীন।

আলোচকরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ডিজিটাল রিস্ক ম্যাপিং, ইনডেক্স তৈরি, লিঙ্গ সংবেদনশীলতা মানবাধিকার বিষয়সহ জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলেন। তাছাড়া ঝুঁকি মোকাবেলায় অভিযোজন সাম্যাবস্থা নিশ্চিত করতে সবাইকে আরো বেশি মনোযোগী একটি যৌথ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের সমবেতভাবে কাজ করার আহ্বান করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন