খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিতে বিশ্বব্যাপী চাপে পড়বে দরিদ্ররা

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনা মহামারীতে অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়েছে অনুন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটি অবর্ণনীয় বিশ্বব্যাপী নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে আর দরিদ্র এসব জনগোষ্ঠীর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে যাচ্ছে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার (এফএও) পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে যাতে দরিদ্র দেশগুলো আরো বেশি সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে খবর রয়টার্স

বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে কভিড-১৯ মহামারী কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না হাতে নগদ অর্থ আসছে না বিপরীতে খাদ্যপণ্যের বাজার চড়া চাহিদা মেটাতে ব্যয় হচ্ছে বাড়তি অর্থ প্রায় সব ধরনের কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছে অন্যদিকে জ্বালানি খরচেও কৃষকের আগের তুলনায় খরচ বেশি হচ্ছে এতে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যয় দাম বাড়ছে এর ওপর যুক্ত হয়েছে আমদানিতে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি সব মিলিয়ে চলতি বছরে বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যপণ্যের ব্যয় মেটাতে বেশ বেগ পোহাতে হবে দরিদ্র দেশগুলোর

এফএও সম্প্রতি তাদের ফুড আউটলুক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ষাণ্মাসিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাবে যার অন্যতম প্রভাবক হবে জাহাজীকরণের বাড়তি ব্যয় সব মিলিয়ে বছর খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় দশমিক ৭১৫ ট্রিলিয়ন ডলার বা লাখ ৭১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে যেখানে গত বছর ব্যয় ছিল দশমিক ৫৩০ ট্রিলিয়ন ডলার বা লাখ ৫৩ হাজার কোটি ডলার সেই হিসাবে বছর খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বাড়তে পারে ১২ শতাংশ

প্রতিবেদন বলছে, মহামারীর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্যের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রয়েছে তবে ২০২০ সালের শেষ দিকে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে দাম বৃদ্ধির ধারা আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করবে

অন্যদিকে এফএওর ন্যাশনস ক্লাসড অ্যাজ লো ইনকাম ফুড ডেফিসিট কান্ট্রিজ প্রতিবেদনের পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছরে খাদ্য আমদানিতে ব্যয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো

দ্বন্দ্ব-সংঘাত দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা আরো হুমকিতে ফেলেছে মহামারী এরই মধ্যে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়াবে বলে সতর্ক করছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংগঠনগুলো

এফএওর বাণিজ্য বিপণন বিভাগের উপপরিচালক জোসেফ শ্মিধুবার মনে করেন, খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য কেবল বৈশ্বিক সমস্যা না বরং অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়কর অবস্থায় আছে এমন দেশের জন্য এটি একটি মারাত্মক ইস্যু

এফএওর মাসভিত্তিক খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক অনুসারে মে মাসে দাম ১০ বছরের সর্বোচ্চে ছিল মূলত খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যপণ্যের বাজার এতটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সংস্থার অন্য একটি সূচক বলছে, খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় মার্চে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে বিশেষ করে ফ্রেইট ব্যয় বেড়েছে সবমিলিয়ে গেল মার্চে রেকর্ড আমদানি ব্যয় হয়েছে, যা ২০০৬-০৮ ২০১০-১২ সালের মূল্যবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে অবস্থা এতটা শোচনীয় যে, মূল্যস্ফীতির চাপে আর্জেন্টিনা রাশিয়ার মতো অনেক দেশ রফতানি কমিয়ে আনছে

এফএও বলছে, বিশ্বব্যাপী গত বছর প্রধান খাদ্যপণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে, এরই মধ্যে যা আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে শতাংশের মতো আর গত বছর খাদ্যপণ্যের চাহিদা মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে চীন দেশটিতে পশুদের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় খাদ্যশস্যের আমদানি কমিয়ে দেয় বেইজিং তবে পরিস্থিতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিপণ্য আমদানির পরিমাণ আবারো বাড়াতে শুরু করেছে দেশটি যে কারণে আগামী ২০২১-২২ মৌসুমে কেবল ভুট্টা আমদানির পরিমাণ রেকর্ড বাড়াচ্ছে তারা এফএও বলছে, আগামী মৌসুমে চীন কোটি ৪০ লাখ টন ভুট্টা আমদানি করতে পারে ফলে খাদ্যশ্যসটির আমদানিতে এবারো শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখবে চীন চাহিদার এমন উল্লম্ফন খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছে এফএও

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন