সোমবার সন্ধ্যার ভূমিকম্পে সিলেট নগরের রাজা গিরিশচন্দ্র (জিসি) উচ্চ বিদ্যালয় ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
দ্বিতল এ ভবনটির ১০টি কক্ষের প্রতিটির দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়।
এতে বিদ্যালয়ের আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়।
ফাটল দেখা দেয়া ভবনটি ত্রুটিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।
ভবনটি ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রায় নির্মাণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম।
গতকাল দুপুরে ফাটল ধরা ভবনটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন তথ্য জানান।
ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সিলেট অঞ্চলে কোনো নিয়মনীতি না মেনেই গড়ে উঠেছে একের পর এক ভবন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেটের বেশির ভাগ ভবনই ভূমিকম্প সহনীয় নয়।
বিল্ডিংকোড না মেনেই গড়ে উঠেছে এসব ভবন।
তাদের মতে, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে।
৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই ভেঙে পড়বে নগরের ৮০ শতাংশ বহুতল ভবন।
ভূমিকম্প নিয়ে এ আতঙ্কের মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটে দুই দফা ভূমিকম্প হয়।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৭ ও ৬টা ২৯ মিনিটে দুই দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেটে।
রিখটার স্কেলে মাত্র ৩ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্পেই ফাটল দেখা দেয় নগরের বন্দরবাজার এলাকার ঐতিহ্যবাহী রাজা জিসি স্কুলের দ্বিতল ভবনে।
‘কামরান ভবন’
নামে স্কুলের এ ভবনটির প্রতিটি কক্ষের দেয়ালেই ফাটল দেখা দেয়।
দেয়ালের ফাটলের খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে জেলা শিক্ষা ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের নেতৃত্বে একটি দল ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসে।
পরিদর্শন শেষে নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম বলেন, ভবনটি প্রায় ২৮ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
ভবনটি ওই সময়ে ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রায় তৈরি করা হয়নি।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পে ফাটল হওয়া কামরান ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রয়োজনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক আরেকটি ভবন তৈরি করা হবে।
এর আগে ভূমিকম্পের পর সোমবার রাতে ওই ভবনটি পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি দ্রুত ভেঙে ফেলা হবে।
এ ভবনের পেছনে বড় পুকুর ছিল উল্লেখ করে মেয়র আরিফ বলেন, এ স্কুলসহ নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ও মার্কেট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছি।
সে বৈঠকে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ও মার্কেটগুলো দ্রুত পরীক্ষা করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
সিলেটের প্রখ্যাত দানশীল ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশচন্দ্র নিজের নামে ১৮৮৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
এ বিদ্যালয়ে ২০০৬ সালে একটি ভবন নির্মিত হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নামে এ ভবনটির নামকরণ করা হয় ‘কামরান ভবন’। পরে এ ভবনের দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন হয়।
রাজা জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মুমিন বলেন, সোমবারের ভূমিকম্পে ওই ভবনের প্রত্যেকটা কক্ষে ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞানাগারসহ ভবনটিতে ১০টি শ্রেণীকক্ষ রয়েছে।
এ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলে বিদ্যালয় খুললে শিক্ষার্থীদের মাঠে বসিয়ে ক্লাস করাতে হবে।
তিনি সরকারের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানান।
