অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বৈরথ

কয়লা আমদানি বন্ধের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে চীনকে

বণিক বার্তা ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার বড় ধরনের খেসারত দিচ্ছে হচ্ছে চীনকে। ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা অন্যান্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কয়লার দামও বেড়ে গেছে। বেড়েছে থার্মাল কোল (তাপ কয়লা) কোকিং কোল দুটোরই দাম। খবর রয়টার্স।

বর্তমানে তাপ কয়লা উৎপাদন, আমদানি ব্যবহারে বিশ্বের শীর্ষ দেশ চীন। গত বছরের অক্টোবর থেকে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা আমদানিতে অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। কয়লার শীর্ষ ব্যবহারকারী চীনের ইস্পাত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বলানি পণ্যটির একটা বড় অংশ আমদানি করতে হতো।

তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক বিরোধের জেরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরে অস্ট্রেলিয়ার জ্বালানি পণ্যটির আমদানিতে অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন। এর বিপরীতে ইন্দোনেশিয়া রাশিয়া থেকে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করেছে দেশটি।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রিফিনিটিভ বলছে, গত বছরের দ্বিতীয় ভাগ থেকেই কয়লা আমদানি বন্ধের প্রভাব পড়ে চীনে। এর প্রভাবে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের কয়লা আমদানি কার্যত শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। যুদিও এক বছর আগে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশটির কয়লা আমদানি বেড়েছিল ৯৪ লাখ ৬০ হাজার টন।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ওপর চীনের অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির আমদানিনির্ভর কয়লা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প উৎস থেকে উচ্চমূল্যে জ্বালানি পণ্যটি কিনতে হয়। স্থানীয় কয়লার পাশাপাশি বিদেশী কয়লার দামও বেড়ে যায়। কারণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকেই চীনের বন্দরে অস্ট্রেলিয়ান কার্গো ভেড়ানোর হার কমতে থাকে। এতে অন্যান্য বছরের শীত মৌসুমের তুলনায় চীনের কোকিং কোলের দাম বেশ বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে চীনের বিশাল বাজার হারানোর ফলে কমতে থাকে অস্ট্রেলিয়ার কয়লার দাম। সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জে অস্ট্রেলিয়ার কয়লার দাম কমেছে ১৮ দশমিক শতাংশ। অক্টোবরের শুরুতে যে কয়লার দাম টনপ্রতি ১৪০ ডলার ছিল, সম্প্রতি তা ১১৪ ডলার ৭১ সেন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। চীনের অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাবেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, চীনের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের একটিও যদি অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রমুখী হয় তাহলেই কয়লার বাজারের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। সাম্প্রতিক চিত্র তা- প্রমাণ করেছে। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার কয়লা রফতানি কমে যাওয়ার বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা রফতানি মূল্য অনেকটাই বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাম্পটম রোডসের কোকিং কোলের সর্বশেষ বাজারমূল্যে পরিবহন খরচ ছাড়াই টনপ্রতি দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২ ডলার ৭৫ সেন্টে। যদিও গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে টনপ্রতি জ্বালানি পণ্যটির দাম ছিল মাত্র ১১৪ ডলার। সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোকিং কয়লার দাম ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের কোকিং কোলের সাম্প্রতিক বাজারমূল্য অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় টনপ্রতি ৩৯ ডলার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ কোকিং কোলের দামও বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ওপর অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার পর থেকে চীনে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। চীনের দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কোকিং কোলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য সর্বশেষ ১৬ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে টনপ্রতি যে কয়লার দাম ছিল মাত্র ২০৬ ডলার ৫৬ সেন্ট বর্তমানে তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০ ডলার সেন্টে।

পরিসংখ্যান বলছে, অস্ট্রেলিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই চীনের অভ্যন্তরীণ কয়লার দাম বেড়েই চলছে। একই সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য বিকল্প আমদানির উৎসের কয়লার দামও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন