সেমিনারে ড. শামসুল আলম

অর্থনীতিতে ক্ষত বাড়াচ্ছে মানবসম্পদের অপচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) . শামসুল আলম বলেছেন, প্রাথমিকের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর অংক করার বিষয়ে পারদর্শিতা আছে। প্রাথমিকেই প্রায় ১৮-১৯ ভাগ শিশু ঝরে পড়ছে। এটা তো মানবসম্পদের বড় অপচয়। অপচয় বন্ধ করতে না পারলে অর্থনীতিতে ক্ষত বাড়াবে।

গতকাল সকালে করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্য শিক্ষা অনলাইন সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার নানা অপচয়ের বিষয় অবতারণা করে তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় অনেকে ভাতা পাচ্ছেন, যাদের পাওয়ার দরকার নেই। আর যাদের প্রয়োজন, তাদের অনেকেই বাদ পড়ছেন। সংখ্যা প্রায় ৪৬ শতাংশ। তার মানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় আছে। তাই ২০২৫ সালের মধ্যে সব দরিদ্র মানুষ সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক।

অনলাইন সংলাপটি জার্মানির ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে . শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা শিক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছি। শিক্ষা ব্যয় শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি, যেটি বর্তমানে দশমিক শতাংশে আছে। আসলে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শিক্ষা ব্যয় শতাংশে যাওয়া উচিত। এটাকে শতাংশে নিতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি দশমিক শতাংশ। সেটি শতাংশে নেয়ার কথা বলেছি।

শ্রেণীত অসাম্য না থাকলেও অঞ্চলগত বৈষম্য আছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায়, দারিদ্র্যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অবস্থা বিরাজমান। সেজন্য দেখবেন নারায়ণগঞ্জে শতাংশ দারিদ্র্য, অথচ রংপুরে ৭১ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের (এএসডি) নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, করোনায় একটা বড় ক্ষতি হলো, অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেকে কাজে চলে গেছে, অনেকের বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। বেসরকারিভাবে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতেনবন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য প্রণোদনার কথা শুনিনি। কতগুলো বন্ধ হয়েছে, তা নিয়ে জরিপ করার প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এবং তা বাজেটের আগেই।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক . মাহফুজ কবীর বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ দরিদ্র, প্রান্তিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার পেছনে পরিবারের অর্থ ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আমূল সংস্কার জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে টেলিভিশন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম দরিদ্র, প্রান্তিক, দূরবর্তী সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে পারেনি। শহরের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ অনলাইন শিক্ষার সুবিধা নিতে পারলেও গ্রামের অনলাইন শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক . তানিয়া হক, রোগতত্ত্ববিদ মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত শর্মী এতে বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন