কাপ্তাই হ্রদ

দেড় যুগে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ

প্রান্ত রনি, রাঙ্গামাটি

এক সময় বড় রুই, কাতল, মৃগেলসহ বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। ২০০২-০৩ অর্থবছরেও হ্রদ থেকে ২৫৮ দশমিক ৭৫ টন কার্পজাতীয় মাছ আহরণ করা হয়। ১৮ বছরের ব্যবধানে কাপ্তাইয়ে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাত্র ৫৩ দশমিক টন মাছ আহরণ করা হয়েছে। প্রায় দেড় যুগের ব্যবধানে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় গভীর জলাশয়ের অভাবে মাছ বড় হতে পারছে না। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে হ্রদে পোনা ছাড়লেও পানি স্বল্পতার কারণে জেলেদের কেচকি জালে রুইজাতীয় মাছের পোনা ধরা পড়ে যায়।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কাপ্তাই হ্রদ দুই প্রজাতির চিংড়িসহ মোট ৭৫ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। এর মধ্যে ৬৭টি প্রজাতির মাছ দেশীয় এবং আট প্রজাতির মাছ বিদেশী। তবে বিএফআরআইয়ের হিসেবে ৭৫ প্রজাতির মাছ থাকলেও বিএফডিসির কাছে প্রায় ৪২ প্রজাতির মাছের বিপণন হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশকিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত। সাদা ঘনিয়া, মহাশোল, সরপুঁটি, মাগুর, কার্পিও, পোয়া, ফাইস্যা, কাকিলা মাছের কোনো হিসাব নেই সংস্থাটির কাছে।

বিএফআরআই রাঙ্গামাটি নদী-উপকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২-০৩ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন ছিল ২৫৮ দশমিক ৭৫ টন; ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ৫৩ দশমিক টনে দাঁড়ায়। সময়ের মধ্যে কেচকি, চাপিলা মলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০০২-০৩ অর্থবছরে হাজার ৪০০ দশমিক ১৯ টন ছোট মাছ আহরণ করা হয়েছিল। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে হাজার ৩৭৪ দশমিক ১৩ টনে দাঁড়ায়।

তিন দশক ধরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ করে সংসারের হাল ধরেছেন নিতাই জলদাশ। তিনি জানান, আগেকার দিনে কাপ্তাই হ্রদে যেসব প্রজাতির বড় বড় মাছ পেতাম, সেগুলো এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। চিতল, মহাশোল, বাঘাইড়, সিলভারকার্পসহ এসব মাছ এখন নেই বললেই চলে। লেক এখন কেচকি-চাপিলার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ছোট প্রজাতির মাছই এখন বেশি ধরা পড়ে।

রাঙ্গামাটি মৎস্যব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বণিক বার্তাকে জানান, দেশের বাজারে ছোট মাছের চেয়ে বড় মাছের চাহিদা বেশি। অথচ কাপ্তাই হ্রদে এখন বড় মাছ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে হ্রদের তলদেশ ভরাটের কারণে মাছ বড় হতে পারছে না। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে জেলেদের কেচকি জালে রুইজাতীয় মাছের পোনা ধরা পড়ে। তাই বড় হওয়ার আগেই তা বিক্রি করা হয়।

তিনি বলেন, কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে তিন মাস নয়, প্রয়োজনবোধে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া জেলেরা যাতে পোনা মাছ ধ্বংস করতে না পারে সে ব্যাপারে বিএফডিসিকে পাহারার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই আগের মতো কাপ্তাই হ্রদে বড় মাছের সংখ্যা বাড়ুক।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙ্গামাটি নদী-উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিএম শাহিনুর রহমান বলেন জানান, বিএফআরআইয়ের সর্বশেষ সরকারি হিসাবে ৭৫ প্রজাতির মাছের কথা বলা হলেও সব প্রজাতির মাছ এখন আর কাপ্তাই হ্রদে পাওয়া যায় না। দেশী মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলসা সাদা ঘনিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রুই, কাতল, মৃগেল, বাঁচা, পাতি পাবদা বড় চিতল প্রজাতিগুলো ক্রমহ্রাসমান প্রজাতির মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে ছোট মাছের আধিক্য বেশি। আমাদের রাজস্ব আদায়ের মূল অংশ আসে ছোট প্রজাতির মাছ থেকেই। তবু আমরা হ্রদে রুইজাতীয় উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছরই পোনা অবমুক্ত করছি।

বিএফআরআই রাঙ্গামাটি নদী-উপকেন্দ্র প্রধান ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আজহার আলী বলেন, হ্রদে গড়ে উৎপাদন বেড়েছে ঠিকই। তবে বড় মাছের আধিক্য কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন