পৌর নির্বাচন ঘিরে জমজমাট ছাপাখানার ব্যবসা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর ও মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাই বারইয়ারহাটে পঞ্চম ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সরগরম দুই পৌরসভা। নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী-সমর্থকদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে ১০টি ছাপাখানার মালিক-শ্রমিকদের।

এদিকে নির্বাচন ঘিরে যশোরের ছাপাখানাগুলোতেও প্রাণ ফিরেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুর বাঘারপাড়া পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল কশবপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী আমেজ লেগেছে জেলার ছোট-বড় ৫০টি ছাপাখানায়।

বছরের অন্য সময় এসব ছাপাখানার কাজ চলে ঢিমেতালে। গত বছরের শুরুর দিকে করোনা মহামারীর কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সীমিত পরিসরে চলে অফিস-আদালতের কার্যক্রমও। ফলে ছাপাখানার ব্যবসায় আরো বেশি মন্দাভাব তৈরি হয়।

তবে আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে মিরসরাই বারইয়ারহাট উপজেলার ১০টি ছাপাখানায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনী ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট কার্ড ছাপানোর কাজ। দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় নির্বাচনী মৌসুমে কয়েক গুণ বেশি ব্যবসা হবে বলে আশাবাদী ছাপাখানার মালিকপক্ষ।

উপজেলার একাধিক ছাপাখানা ঘুরে দেখা গেছে, ছাপখানার মালিক শ্রমিকরা ব্যানার-পোস্টার ছাপানোর কাজে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তবে কর্মব্যস্ততা থাকলেও আছে উৎসবের আমেজ। নির্বাচন ঘিরে ছাপাখানার ব্যবসা জমজমাট। তবে পর্যন্ত কত টাকা লেনদেন হয়েছে তার সঠিক হিসাব দিতে পারেননি ছাপাখানার মালিকরা। ধারণা করা হচ্ছে, ১০টি ছাপাখানায় প্রায় ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। অবশ্য অনেক প্রার্থী চট্টগ্রাম শহর থেকেও ছাপার কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।

বারইয়ারহাট পৌরসদরে অবস্থিত টিএস প্রিন্টার্স। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. ইসহাক মাসদু বলেন, গতবারের তুলনায় এবার কাউন্সিলরপ্রার্থী বেশি। তাই ছাপাখানায় কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। শেষ সময়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্ড কেন্দ্রে টাঙানোর জন্য পোস্টার ব্যানার অর্ডার করছেন, যা নির্বাচনের আগের দিন সরবরাহ করা হবে।

মিরসরাই আর্ট প্রেসের স্বত্বাধিকারী কার্তিক দে জানান, তিনি প্রায় ১৮ জন কাউন্সিলরপ্রার্থীর ব্যানার-পোস্টারসহ বিভিন্ন ধরনের ছাপানোর কাজ পেয়েছেন। কয়েক দিন ধরে অনেক প্রার্থী নতুন করে পোস্টার, ব্যানার, কার্ড লিফলেট ছাপার কাজ দিয়েছেন।

এদিকে যশোরের প্রায় ৫০টি ছাপাখানায়ও চলছে কর্মযজ্ঞ। নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টার তৈরিতে আবারো প্রাণ ফিরেছে ছাপার ব্যবসায়। তবে কাগজের দাম বাড়ায় ব্যবসায় অসুবিধা হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেছেন ছাপাখানা মালিকরা।

যশোরের একতা প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী রকিব হোসেন স্বপন বলেন, দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ছাপাখানার কাজ বন্ধ ছিল। স্কুল-কলেজের কাজের ওপর ছাপাখানা টিকে থাকে। এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। পৌরসভার নির্বাচনে কাজের অর্ডার আসা শুরু হয়েছে। তবে সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা কাগজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কাগজের দাম গ্রামপ্রতি ১০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে ব্যবসায় সুবিধা করা যাচ্ছে না।

সুলতান প্রেসের মালিক মো. ইসলাম বলেন, পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে পোস্টারের কাজ পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানো যাচ্ছে। এক বছর ব্যবসা না থাকায় পুঁজি হারিয়েছি।

চাকলাদার প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপক গোপিনাথ দাস জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টি ছাপাখানা রয়েছে। মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ বেশি হয়ে থাকে। এক বছরের বেশি সময় কাজ না থাকায় মালিকপক্ষ ভর্তুকি দিয়েছে। তবে নির্বাচনে কিছুটা চাঙ্গাভাব এসেছে।

যশোরের সবচেয়ে বড় ছাপাখানা নাভারণ প্রিন্টার্স অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। এটি আফিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। গ্রুপের পরিচালক মাহাবুব আলম লাভলু বলেন, করোনাকালে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাপাখানাগুলো। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় কাজের অর্ডার আসতে শুরু করেছে। ঘুরে দাঁড়াতে খাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখতে হবে কমপক্ষে দুই বছর।

কাস্টমস, এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অফিসের যুগ্ম কমিশনার নাহিদ নওশাদ মুকুল জানান, কাস্টমসের দায়িত্ব হলো ভ্যাট আদায় করা। ব্যবসা করলে ভ্যাট দিতে হবে। তবে ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা আমরা বিবেচনা করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন