সৌদি আরবে সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

পরিচয় পাওয়া মৃত পাঁচ বাংলাদেশীর ৩ জনই অবৈধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সৌদি আরবের মদিনা শহরের একটি সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ছয়জন বাংলাদেশী কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার ভোরে মদিনা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মোট সাতজন নিহত হয়। এর মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশী বলে জানিয়েছে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট। মৃতদের পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পরিচয় পাওয়া পাঁচ বাংলাদেশীর তিনজনই হুরুবপ্রাপ্ত (পলাতক হিসেবে চিহ্নিত) আর হুরুবপ্রাপ্ত কর্মীরা সৌদি আরবে অবৈধ হিসেবে গণ্য হন। অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ কিংবা ওয়ার্কম্যান কম্পেনসেশন না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে হুরুবপ্রাপ্ত তিন বাংলাদেশী কর্মীর পরিবারের।

জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট সূত্রে জানা গেছে, নিহত ছয় বাংলাদেশীর মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার মিজানুর রহমান মো. আরফাত হোসেন মানিক এবং কক্সবাজারের মহেশখালীর ইসহাক মিয়া, আব্দুল আযিয মো. রফিক উদ্দিন। তাদের মধ্যে মিজানুর রহমান, আব্দুল আযিয মো. রফিক উদ্দিন হুরুবপ্রাপ্ত।

প্রসঙ্গে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। অন্য একজন বাংলাদেশীর পরিচয় সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। মরদেহগুলো বর্তমানে মদিনার কিং ফাহাদ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষিত আছে। মদিনায় অবস্থানরত কনস্যুলেট প্রতিনিধি ঘটনাস্থল থানা পরিদর্শন করেছেন। নিহতরা ক্ষতিপূরণ কিংবা ওয়ার্কম্যান কম্পেনসেশন পাবেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কোনো কর্মী ছুটি না নিয়ে কোথাও চলে গেলে নিয়োগকর্তা তাকে হুরুব বলে ঘোষণা দেন। নিয়োগকর্তা ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে বিষয়ে জানাতে পারেন অথবা অনলাইনেও হুরুব ঘোষণা করতে পারেন। হুরুব ঘোষণা করার ২০ দিনের মধ্যে যদি ওই কর্মী কাজে ফিরে আসেন, তাহলে নিয়োগকর্তা হুরুব উঠিয়ে নিতে পারেন। আর ২০ দিনের মধ্যে না ফিরলে ওই কর্মী সৌদি আরবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হন জোরপূর্বক দেশে ফিরতে বাধ্য হন। কোনো শ্রমিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেই তাকে হুরুব বা পলাতক ঘোষণা করছেন নিয়োগকর্তা। ফলে অবৈধ হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন ওই শ্রমিক।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত . মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) গভীর শোক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, নিহতদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব। রাষ্ট্রদূত জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সেলরকে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় বাংলাদেশীদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে দূতাবাসকে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এছাড়া স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় লাশ দ্রুত দেশে পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করেন।

বাংলাদেশী কর্মী সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে। বর্তমানে দেশটিতে ২১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২টিরও বেশি দেশ থেকে ফিরে এসেছে মোট হাজার ৮৮৪ জন কর্মীর মরদেহ। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৭৬২ জন প্রবাসীর মরদেহ। ফেরত আসা মরদেহের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। গত বছর দেশটি থেকে ফেরত এসেছে মোট ৬৯৬ জন প্রবাসীর মরদেহ। এছাড়া কুয়েত থেকে ২৭২ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৪৭, বাহরাইন থেকে ৮২, কাতার থেকে ১৬৪, ওমান থেকে ২৮০, সিঙ্গাপুর থেকে ২৭, জর্ডান থেকে ২৫, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১২, ইতালি থেকে ৩৪, লেবানন থেকে ৫৫, গ্রিস থেকে পাঁচ, মালদ্বীপ থেকে ২৩, মরিশাস থেকে ১৮, স্পেন থেকে , ইরাক থেকে ৩০, লিবিয়া থেকে ১৩ জন প্রবাসীর মরদেহ ফেরত এসেছে। বাকি প্রবাসীদের মরদেহ এসেছে অন্যান্য দেশ থেকে।

উল্লেখ্য, প্রবাসে বৈধভাবে কর্মরত অবস্থায় যেসব শ্রমিক মারা যান তাদের মরদেহই মূলত পরিবহনের ব্যবস্থা করে প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এজন্য প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে লিখিতভাবে আবেদন করতে হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত যেসব বৈধ প্রবাসী কর্মীর মরদেহ পৌঁছায়, তাদের দাফন পরিবহনের জন্য বিমানবন্দর থেকেই স্বজনদের হাতে ৩৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন