চীনের সঙ্গে শুরু করা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের বলি হয়ে চাকরি হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াই লাখ কর্মী। ইউএস-চীন বিজনেস কাউন্সিলের (ইউএসসিবিসি) এক গবেষণায় এ দাবি করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
ইউএসসিবিসি বলছে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারিয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার কর্মী। তারা আরো বলছে, ধীরে ধীরে শুল্ক কমানোর ফলে উভয় পক্ষের প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে এবং ২০২৫ সালের মাঝে আরো ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাও লিজিয়ান বলেন, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু করা বাণিজ্যিক লড়াই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারবে না। এটা কেবল অন্যদের এবং তাদের নিজেদের ক্ষতিসাধন করবে। আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক সতর্কবার্তাগুলো আমলে নেবে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে চীনের সঙ্গে কাজ করবে।
চীনে ব্যবসারত প্রধান মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ইউএসসিবিসি, অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সমীক্ষার বরাত দিয়ে আরো জানায়, পৃথিবীর দুটি বৃহৎ অর্থনীতির বিচ্ছিন্নতার ফলে আগামী পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হতে পারে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। যে কারণে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি হারাতে পারেন ৭ লাখ ৩২ হাজার এবং ২০২৫ সালে চাকরি হারাতে পারেন ৩ লাখ ২০ হাজার।
গবেষণায় বলা হয়, চীনের বাজারে রফতানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ লাখ কর্মীর জীবিকা নিশ্চিত হয়। এছাড়া চীনা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোয় ১ লাখ ৯৭ হাজার মার্কিনিকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৯ সালে চীনে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে মার্কিন কোম্পানিগুলো।
চলতি দশকে চীন যেখানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ প্রবৃদ্ধির ক্রীড়নক হতে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে অর্থনীতির চাকা সবল রাখতে চীনের বাজারে অবস্থান জরুরি যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের কোম্পানিগুলোর।
২০১৬ সালের নির্বাচনী বছরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনবেন। এক্ষেত্রে তিন
মূলধারার অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ তেমন পাত্তা দেননি। অথচ মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে চীনের সঙ্গে ঘাটতি আরো বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। গত বছরের নভেম্বর নাগাদ ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
২০১৯ সালে অবশ্য চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছিল। চীনের পরিবর্তে মার্কিন সংস্থাগুলো আমদানির জন্য ভিয়েতনামের মতো দেশকে বেছে নিয়েছিল। তবুও বণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ২০১৬ সালে ২৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি ছিল। এক্ষেত্রে আংশিক কারণ ছিল পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেইজিংও প্রায় ১১ হাজার ডলার মূল্যমানের মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা। ফলে মার্কিন পণ্যগুলোর আমদানি কমে যায় এবং এটি গত বছরের শেষ কয়েক মাসে এসে পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে।