জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমনের পাশাপাশি ডি-র‌্যাডিকালাইজশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, আজ যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাদের ট্রাক্টর, কৃষিজ উপকরণ ও নগদ টাকা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে র‍্যাব সদর দফতরে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান 'নব দিগন্তের পথে' প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এদিন ৬ জন জেএমবি এবং ৩ জন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এরা হচ্ছে- সিলেটের শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪) ও ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯), কুমিল্লার আবিদা জান্নাত আসমা (১৮) ও আবদুর রহমান সোহেল (২৮), চাঁদপুরের মোহাম্মদ হোসেন(২৩) ও (৫) মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), ঝিনাইদাহের মো. সাইফুল ইসলাম (৩১), চুয়াডাঙ্গার মো.আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬) ও মো. সাইদুর রহমান (২২)।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন জিরো টলারেন্সের কথা। এটা আমরা কখনও বলি না জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করেছি। বলেছি, জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। জিজ্ঞাসিত হয়েছি যে, তোমরা কীভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করছো? বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। একের পর এক যখন জঙ্গিরা নাশকতা ঘটাচ্ছিল তখন আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের মানুষকে, কৃষক, শ্রমিক-শিক্ষকসহ দলমত ধর্ম নির্বিশেষ মেহনতি জনতাকে ডাক দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। স্কুলের ছাত্রটিও ঝুলিয়েছিল জঙ্গিবাদকে সমর্থন করি না।

পুরোহিতকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, পঞ্চগড়ে হিন্দু ইস্কন মন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা, বৌদ্ধ পুরোহিতকে হত্যা, শিয়া মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ঈমামকে গুলির দৃশ্য আমরা দেখেছিলাম। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে র‌্যাব এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজ তারই প্রতিফলন এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ ধারণ করেছিল, আজ তারা বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছেন, তারা তাদের বাবা-মায়ের মুখে আজ হাসি ফুটিয়েছেন, যা অনেকদিন পর দেখছি। ক্যামেরাবন্দি এ দৃশ্য দেখবে দেশের মানুষ। এজন্য র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, উন্নয়নের রোল মডেলের সাথে সাথে জঙ্গিবাদ দমনেও বাংলাদেশ রোল মডেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গিবাদকে সমূলে মূলোৎপাঠনে বিশেষ দিক নির্দেশনা হচ্ছে, যারা ভুল পথ ছেড়ে, জঙ্গিবাদ ছেড়ে সমাজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আসতে চায়, যারা চরমপন্থা বা জলদস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়, তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। সেটার বাস্তবায়নই আজকের এই অনুষ্ঠান।

র‍্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জঙ্গি আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করেন র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআই এর শেখ ফজলে রহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের। 

এরআগে, জঙ্গি দমনে সবচেয়ে সফল পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাবের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফুল দিয়ে আজ আত্মসমর্পণ করে ৯ জঙ্গি সদস্য। আত্মসমর্পণকৃত ৯ জঙ্গি ‘ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশন’ অ্যান্ড ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ এর মাধ্যমে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার জীবন পরিত্যাগ করে শান্তি ও আলোর পথ তথা সমাজের মূলধারায় নিজেদের সমর্পণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন