বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর মধ্যে যেহেতু চুক্তি হয়ে গিয়েছে, টিকা আসতে সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই। সিরামের পক্ষ থেকেও এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি যে করোনার টিকা আসতে দেরি হতে পারে।
ভারত সরকারের টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, যে নিউজটার কথা উঠেছে, আমিও শুনেছি। আমি, আমরা এখনো এটি নিয়ে অত চিন্তিত না। কারণ আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। চুক্তিতে পরিষ্কার বলা রয়েছে, আমাদের দেশে অনুমোদন দেয়ার এক মাসের মধ্যে তাদের (সিরাম ইনস্টিটিউট) টিকা দিতে হবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি।
তিনি বলেন, চুক্তি যেহেতু হয়ে গিয়েছে, এটাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। এটা নিয়ে আজ সিরামের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি যে করোনার টিকা আসতে দেরি হতে পারে। সরকার যদি নিয়মকানুন মেনে অনুমোদন দিয়ে দেয়, এক মাসের মধ্যে টিকা আসবে। এর নিয়ন্ত্রণের দিকটা বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
নাজমুল হাসান জানান, অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে করোনা টিকা দেয়া যাবে। এলসি বা এগ্রিমেন্ট যা হয়েছে, তা দিতেই হবে। ভারত সরকার যা বলেছে, তা লজিক্যাল, ওদের দেশের মানুষকে না দিয়ে রফতানি করা যাবে না। কিন্তু ভারত সরকার যা অনুমোদন দিয়েছে, সেটি হলো স্থানীয় বাজারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন। এটা সব দেশে তা-ই লেখে। আমার ধারণা, এটা কেউ ভুল করছে। ওখানে কোথাও লেখা নেই যে এক্সপোর্ট করতে পারবে কি পারবে না। তবে এক্সপোর্টের ওপর একটি বার দিতেই পারে।
নাজমুল হাসান জানান, এটি বাণিজ্যিক চুক্তি। আমরা শুধু সরকারকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। এতদিনে এটা বুঝে যাওয়া উচিত, বেক্সিমকো যদি বুকিং না দিত, তাহলে কী হতো। কোন কোম্পানি বা সরকার কোথায় বুকিং দিয়েছে? কোন ভ্যাকসিন এনেছে বা আনতে পারবে? আর যে দাম বলছি, এর দ্বিগুণ দামে যদি কেউ দিতে পারে, আমি চ্যালেঞ্জ করে দিলাম, প্রশ্নই ওঠে না।
নাজমুল হাসান বলেন, এখানে জিটুজির (বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে) কোনো প্রশ্নই ওঠে না। মানে আমার জানা নেই। আপনারা যে জিটুজির কথা বলছেন, স্বাস্থ্য সচিব বলেছেন, উনি কোন ভ্যাকসিনের কথা বলছেন, আমি জানি না। এটা হতে পারে অন্য ভ্যাকসিন। সরকারের অন্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি থাকতেই পারে, আমার জানা নেই। আমি বলতে পারব সিরাম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ সরকার যে চুক্তিটি করেছে সেই তিন কোটির বিষয়ে। চুক্তিটি আসলে ত্রিপক্ষীয়ই। চুক্তি অনুযায়ী যে ব্যাংক গ্যারান্টি সরকারের কাছে দেয়ার কথা, সেটা পৌঁছে দিয়েছি। এখন বাকি আছে রেজিস্ট্রেশন। আমরা ডকুমেন্ট আগেই জমা দিয়েছি বৃহস্পতিবার। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আজ আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছি। এখন অনুমোদন কখন দেবে, তাদের ব্যাপার। এখন বাকি যেটা আছে সরকারের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, গতকালই বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত এ ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে নাজমুল হক বলেন, ভ্যাকসিনের স্বত্বটি বিক্রি হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে। তাদের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ২০ কোটি। কিন্তু তারা চার বিলিয়নের (৪০০ কোটি) অর্ডার পেয়ে বসে আছে। দুই বছরের মধ্যে দিতে হবে। ওদের পক্ষে তো এটা দেয়া সম্ভব না। এ পরিস্থিতিতে তারা বিকল্প উৎপাদন ক্ষেত্র খুঁজছিল। তারা দেখল, পৃথিবীতে বৃহত্তম ক্ষেত্র হলো সিরাম ইনস্টিটিউট।