আমন ধানে ইঁদুরের আক্রমণে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় হিলি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

দিনাজপুরের হিলিতে চলতি মৌসুমে আমন ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। মাঠের পর মাঠ ধানের গাছ ইঁদুরে কেটে শেষ করে দিচ্ছে। কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ থেকে শুরু করে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কিছুতেই কমছে না ইঁদুরের উপদ্রব। এতে ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়ন, বোয়ালদাড় ইউনিয়ন, খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়ন, পৌরসভার প্রায় সব এলাকায়ই ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে ইঁদুর দমনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু আদতে কোনো কাজে আসছে না এসব চেষ্টা।

হিলির জালালপুর গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় করোনাকালীন সময়ে পরিবারের চালের চাহিদা মেটাতে এবারে আমন চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন কৃষকরা। সে আশায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণ করেন কৃষক। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্নে হানা দিয়েছে ইঁদুর।

তিনি বলেন, আমি নিজেও ১০ বিঘা জমিতে ধান আমন আবাদ করেছি। এর মধ্যে দুই বিঘায় স্বর্ণা- জাতের ধান রোপণ করেছি, বাকি আট বিঘা জমিতে কাটারি ধান লাগিয়েছি। কিন্তু যে দুই বিঘা জমিতে স্বর্ণা- জাতের ধান লাগিয়েছি তার অবস্থা একেবারে খারাপ। ইঁদুর পুরো মাঠের ধানের গাছ কেটে শেষ করে ফেলছে। যে যা বলছে সে মোতাবেক ওষুধ দিচ্ছি, কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আবার পলিথিন বেঁধে দিয়েছি, তাতেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যেভাবে গাছ হয়েছিল তাতে ধানের বাম্পার ফলন হতো, কিন্তু যে হারে ইঁদুর ধান কাটছে, তাতে সবশেষ আমরা আশাই ছেড়ে দিয়েছি, যা হওয়ার হবে।

একই গ্রামের কৃষক সুজন হোসেন বলেন, এবারে ধানক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্বর্ণা- জাতের ধানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত ইঁদুর কেটে শেষ করে দিচ্ছে। যে জমিতে ইঁদুর ধরছে, পুরো জমির ধান শেষ করে দিচ্ছে ইঁদুর। কীভাবে ইঁদুর তাড়াব, সেই পদ্ধতিও আমাদের জানা নেই। তার পরও আমরা কৃষকরা যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছি, তাতে করে ইঁদুর তাড়ানো যাচ্ছে না। এমনকি কৃষি অফিসের পক্ষ থেকেও কোনো পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না।

কৃষকরা বলছেন, ইঁদুর যেভাবে ধান কেটে নষ্ট করছে, এতে এবারে ধান আবাদ করে লাভ তো দূরে থাকল, উৎপাদন খরচই উঠবে না। তাই লোকসান ছাড়া আর কিছুই হবে না। আমরা জমিতে যে পরিমাণে খরচ করেছি, সেই খরচ ওঠানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা নাজনীন বলেন, চলতি আমন মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে, ফসলের বর্তমান অবস্থা ভালো। কোথাও কোথাও ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ইঁদুর দমনে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি একসঙ্গে সমন্বয় করে ইঁদুর দমনের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে বাঁশের তৈরি যে প্রচলিত ফাঁদ, বিষফাঁদ, ধানের জমিতে কলাগাছ পুতে দেয়া। এতে জমিতে পেচা বসবে রাতের বেলা পেচা ইঁদুর ধরে খাবে, তাতে কিছুটা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ হবে। আমরা আশা করছি, ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। যেসব জমিতে এরই মধ্যে ইঁদুর ধান কেটে ফেলছে, সেগুলো তো আর রিকভার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাতে ধানের ফলনের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন