বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে ওয়ালটনের ভ্যালুয়েশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর লেনদেনের দ্বিতীয় দিনেই শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভ্যালুয়েশন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল লেনদেন শেষে কোম্পানিটির ভ্যালুয়েশন ১৩৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। দুই দিনে ১০০ শতাংশ দর বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারের।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সর্বশেষ ৫৬৭ টাকায় লেনদেন হয়েছে। দিনের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩৭৮ টাকা। এর আগে গত বুধবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) লটারিতে পাওয়া ২৫২ টাকার শেয়ার প্রথম দিনে ৩৭৮ টাকায় লেনদেন হয়েছিল। লেনদেনের প্রথম দিনে ৩৪৮টি এবং দ্বিতীয় দিনে হাজার ৪৪২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। গতকাল লেনদেন শেষে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের বাজার মূলধন বা ভ্যালুয়েশন দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকায়। ওয়ালটনের আগে দেশের পুঁজিবাজারে বিলিয়ন ডলার ভ্যালুয়েশনের কোম্পানি ছিল পাঁচটিগ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ইউপিজিডিসিএল) রেনাটা লিমিটেড। গতকাল রেনাটাকে ষষ্ঠ অবস্থানে ঠেলে দিয়ে বিলিয়ন ডলার ভ্যালুয়েশনের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে উঠে আসে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুসারে, পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৪৩ টাকা ১৬ পয়সা, পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ছাড়া যা ১৩৮ টাকা ৫৩ পয়সা। সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ( ইপিএস) হয়েছে ৪৫ টাকা ৮৭ পয়সা। গত পাঁচ বছরের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভারিত গড় হারে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২৮ টাকা ৪২ পয়সা। পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইপিএস নিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে ওয়ালটন। আর তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অর্থবছরের প্রকাশিত এনএভিপিএস বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওয়ালটন। তালিকাভুক্ত দেশী-বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটনের এনএভিপিএস শীর্ষ পাঁচে রয়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ইপিএস বিবেচনায় ওয়ালটনের অবস্থান অষ্টম।

গত ২৩ জুন অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭২৯তম কমিশন সভায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কাট-অফ প্রাইস বা প্রান্তসীমা মূল্যের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে কোম্পানিটির শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বিএসইসি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজকে ১০০ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৭টি শেয়ার যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের নিজেদের বিডিংকৃত মূল্যে ইস্যু করা হয়। যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিলেন। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি শেয়ার কাট-অফ প্রাইসের ২০ শতাংশ কমে ২৫২ টাকায় ইস্যু করা হয়। মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ কমে শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। এজন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কাট-অফ প্রাইসের ২০ শতাংশ কমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে শেয়ার ইস্যুর জন্য কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল।

এর আগে মার্চ বিকাল ৫টা থেকে মার্চ বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা ওয়ালটনের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে ইলেকট্রনিক বিডিং অনুষ্ঠিত হয়। বিডিংয়ে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারিত হয় ৩১৫ টাকা। পাবলিক ইস্যু রুলস অনুসারে কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার ইস্যু করা হয়। সে হিসেবে ২৮৩ টাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওয়ালটনের শেয়ার পাওয়ার কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি বিএসইসির ৭১৪তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির আইপিও বিডিং অনুমোদিত হয়। আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় বিএমআরই, ৩৩ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পরিশোধ সাড়ে কোটি টাকা আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ নির্বাহে ব্যয় করবে তারা। ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ট্রিপল ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন