অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

২০২১ সালের আগে মূল্যবৃদ্ধির আশা দেখছে না কেউ

বণিক বার্তা ডেস্ক

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে টালমাটাল অবস্থার সূচনা চলতি বছরের শুরুতে। নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী চাহিদা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দিয়ে জ্বালানি পণ্যটির বাজার পরিস্থিতিকে রেকর্ড দরপতনের মুখে ফেলে দেয়। ধারাবাহিকতায় গত মার্চে ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে যায় জ্বালানি তেলের দাম। এমনকি ওই সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল শূন্য ডলারের নিচে বিক্রি হয়েছে, যা আগে কখনই দেখা যায়নি।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৪০ ডলারের আশপাশে বেচাকেনা হচ্ছে। দাম ক্রেতা বা আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য কাঙ্ক্ষিত হলেও বিক্রেতা বা রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য হতাশার।

কেননা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না বাড়লে রফতানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়বে। যা সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর বেশির ভাগ আমদানিকারক দেশও পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাবে জ্বালানি পণ্যটির ক্রয় বাড়াতে পারছে না। ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক কম থাকলেও চাহিদা সে তুলনায় বাড়ছে না।

পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো আগামী দিনগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? কবে নাগাদ জ্বালানি পণ্যটির দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়তে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর অনেকগুলো যদি-কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে। তবে মোটা দাগে বলা যায়, করোনা মহামারী বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের চাহিদা যে হারে কমিয়েছে, সেটায় দৃশ্যমান উন্নতি না হলে পণ্যটির দামও খুব একটা বাড়বে না।

চলতি বছর সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। বরং ২০২১ সালে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গ্রেডভেদে ব্যারেলপ্রতি ৫০-৬০ ডলারের মধ্যে অবস্থান করতে পারে, এমনটাই মনে করছে পণ্যবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করলে এমন ইঙ্গিত মেলে।

বার্কলেস কমোডিটিজ রিসার্চ : ব্রিটিশ বিনিয়োগ ব্যাংক বার্কলেস পিএলসির আওতাধীন বার্কলেস কমোডিটিজ রিসার্চ জানিয়েছে, চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৪৩ ডলারে। আর প্রতি ব্যারেল ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৩৯ ডলারে। প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি পণ্য দুটির গড় দাম আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ব্যারেলপ্রতি ডলার করে বাড়িয়েছে।

২০২১ সালে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৫৩ ডলারে। আর প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের গড় দাম ৫০ ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সিটি ব্যাংক: নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিটি ব্যাংকের সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাঁড়াতে পারে ৫৫ ডলারে। বছরের শেষ নাগাদ তা ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর আগামী বছরের শেষ নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়ে দাঁড়াতে পারে ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলারে।

গোল্ডম্যান স্যাকস : পণ্যবাজারে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৫ ডলারে উঠতে পারে। তবে বছরের শেষ দিকে গিয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের দাম উঠতে পারে ৫৫ ডলার ৮৮ সেন্টে। তবে বছরের শেষ দিকে গিয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৫১ ডলার ৩৮ সেন্টে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি প্রভাবক কাজ করবে। এর মধ্যে অন্যতম আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর লাগাম টেনে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ানো। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার লাগাম টানা এবং সব দেশের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাও জ্বালানি তেলের সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্লুমবার্গ, রয়টার্স অয়েলপ্রাইসডটকম অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন