সিরাজগঞ্জ জেলা

তিন দফা বন্যায় ভেসে গেছে পাঁচ শতাধিক পুকুরের মাছ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা বৃষ্টি উজানের ঢলে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপত্সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার নয় উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। পরপর তিন দফা বন্যায় ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার পানিতে জেলার পাঁচশতাধিক পুকুর তলিয়ে গিয়ে সব মাছ ভেসে যায়। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, প্রথম দফা বন্যায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি ১০১, দ্বিতীয় দফায় ৮১ তৃতীয় দফায় বিপত্সীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তৃতীয় দফা বন্যার পানি কয়েক দিন ধরে কমতে শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গতকাল বিপত্সীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টানা বৃষ্টি উজানের ঢলে যুমনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর, কাজীপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ সদর উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চলনবিলসহ নিম্নাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা পুকুর তালিয়ে যায়।

একাধিক মৎস্যচাষী জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়া থেকে মাছ রক্ষা করতে অনেকে পুকুরের পাশে জাল দিয়ে বেড়া দেয়া হয়। তার পরও রক্ষা হয়নি।

তারা জানান, একদিকে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে মাছের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়েছে। তাছাড়া মাছের চাহিদা থাকলেও পরিবহনসহ নানা জটিলতার কারণে সময়মতো মাছ পাঠানো সম্ভব হয় না। অবস্থায় পরপর তিনবার বন্যায় সব মাছ ভেসে যাওয়ায় লোকসানের পাল্লা আরো ভারী হয়েছে।

তাড়াশ উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের মৎস্যচাষী আব্দুল মান্নান জুলমাত হোসেন জানান, তারা দুজন মিলে দুই বছরের জন্য পাঁচটি পুকুর সাড়ে লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। সেই পুকুরে রুই, কাতলাসহ দেশীয় মাছ চাষ করেন। ১৫ দিন ধরে করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাঁচটি পুকুর প্লাবিত হয়। দুটি পুকুর থেকে পাঁচ মণ মাছ ধরতে পেরেছেন। বাকি মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় তাদের ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উল্লাপাড়ার মোহনপুর গ্রামের মৎস্যচাষী করিম হোসেন জানান, বিল অঞ্চলে পানি বৃদ্ধির ফলে মাছ চাষ করা পুকুর ভেসে গেছে। আমারও ১০ বিঘা আয়তনের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের পাশে জাল দিয়ে বেড়া দেয়া হয়। তার পরও রক্ষা হয়নি। এতে তার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুকুর ভেসে যাওয়ায় এলাকার শত শত মৎস্যচাষী ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহেদ আলী বলেন, তিন দফা বন্যায় জেলায় এখন পর্যন্ত ৫৭৪টি পুকুর ২০টি দীঘি প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে, যার আয়তন প্রায় ১৮৫ হেক্টর। এতে ১৩২ টন মাছ লাখ পোনা মাছ ভেসে গেছে। অবকাঠামোসহ খাতে মৎস্যচাষীদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের তালিকা করে সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন