চেংদু কনস্যুলেট ছেড়ে যাচ্ছেন মার্কিন কূটনীতিকরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনের চেংদুতে অবস্থিত কনস্যুলেট ত্যাগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ওই কনস্যুলেট বন্ধ করে দিতে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিল চীন। সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই সোমবার ওই কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্টাফরা। সময় সেখান থেকে নামিয়ে ফেলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। দেয়াল থেকে সরিয়ে ফেলা হয় কনস্যুলেটের নামফলক। খবর বিবিসি।

কূটনীতির আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গত সপ্তাহে টেক্সাসের সানফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত চীনের কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পাল্টা হিসেবে চেংদুতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট বন্ধের সময় বেঁধে দেয়া হয় ৭২ ঘণ্টা।

সোমবার শেষ হওয়ার আগেই ওই ভবন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সময় ভবনটির বাইরে বিপুলসংখ্যক উত্সুক মানুষের ভিড় জমে। তাদের দৃশ্য ভিডিও করতে, ছবি তুলতে এমনকি সেলফি তুলতে দেখা যায়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ওই ভবনে প্রবেশ করেছেন চীনা কর্মকর্তারা। তারা ভবনটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে এখন। একটি ইস্যু নয়, একাধিক ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছে দুই দেশই। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, কূটনৈতিক তত্পরতার আড়ালে চীন যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। এজন্য গত সপ্তাহে সানফ্রান্সিসকো কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগের পেছনে তারা প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। এর পরই চেংদু কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয় চীন। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য, করোনা মহামারী, হংকংয়ে বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দেয়া নিয়ে সংঘাতময় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার খবরে দেখানো হয় মার্কিন কনস্যুলেট ত্যাগ করছে লরি। কূটনীতিকদের ব্যবহূত বিভিন্ন জিনিস সরিয়ে ফেলছেন কর্মীরা। সোমবার সকালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করে। তাতে দেখানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। সময় ভবনটির বাইরে মোতায়েন করা হয় কয়েক ডজন পুলিশ। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের সরে যেতে বলেন। রোববার যখন কনস্যুলেট থেকে একটি বাস বেরিয়ে যায়, তখন সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের দুয়োধ্বনি দিতে শোনা যায়। একই ঘটনা ঘটেছিল গত সপ্তাহে সানফ্রান্সিসকোতে। সেখান থেকে যখন চীনা কূটনীতিকরা বেরিয়ে যান, তখন সেখানেও দুয়োধ্বনি দেয়া হয়েছিল।

বেশকিছু ইস্যুতে চলতি বছরের শুরু থেকেই বেড়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ২০১৮ সাল থেকে বহুবার বাণিজ্যিক ইস্যু নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়েছে। চলতি বছর চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ইস্যুতেও বেইজিংকে দোষারোপ করেছে ওয়াশিংটন। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে।

গত মাসে হংকংয়ের ওপর নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে চীন। নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে উত্তেজনা। সর্বশেষ দুই দেশের মধ্যে কনস্যুলেট বন্ধের ঘটনা তাদের দ্বন্দ্বকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে চেংদুতে মার্কিন কনস্যুলেটটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে কনস্যুলেটটিতে কর্মচারীর সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে ১৫০ জন স্থানীয় কর্মচারী। কনস্যুলেটটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখান থেকেই স্বায়ত্তশাসিত তিব্বত অঞ্চল সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে থাকে মার্কিন প্রশাসন। এছাড়া চীনের শিল্প উঠতি সেবা খাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৃষি, মোটরগাড়ি যন্ত্রপাতি বিক্রির সুযোগ্য স্থান হয়ে উঠছে চেংদু।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন