স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর দেশের স্বাস্থ্য খাতের নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গতকাল দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিদপ্তরের ডিজি গ্রেড- পদের কর্মকর্তা হওয়ায় তার পদত্যাগ করার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আসবে না। এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে যাবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলতে পারবে বা নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) থাকার সময় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে নিয়োগ দেয় সরকার। চাকরির মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ তাকে দুই বছরের চুক্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সেই আদেশে বলা হয়েছিল, ১৫ এপ্রিল বা যোগদানের তারিখ থেকে তিনি দুই বছরের জন্য মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকবেন। সেই হিসেবে, আগামী বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তার চুক্তির মেয়াদ ছিল। ১৯৮৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা আবুল কালাম আজাদ ২০০১ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান।

১৯৯০ সালে তত্কালীন আইপিজিএমআর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এমফিল ডিগ্রি নেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক এবং অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা উন্নয়ন) পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নানান অনিয়মের খবর বেরিয়ে আসে।  চিকিৎসকদের নিম্ন মানের সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সমালোচিত হতে থাকেন তিনি। এরপর রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হয়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সরকারের চুক্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দিয়েছিল। করোনাসংক্রান্ত বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির প্রকল্পের কেনাকাটায় অনিয়মের খবরও প্রকাশিত হয়। রিজেন্ট হাসপাতালে সরকারি যন্ত্রপাতি সরবরাহের অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে। এসব নানান বিষয় নিয়ে সমালোচিত ছিলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজাদ এর মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার পর গত মে মাসে তিনি সিএমএইচে ভর্তি হয়েছিলেন। সরকারি হাসপাতালে সেবা না নেয়ার বিষয়েও সে সময় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়।

এর আগে গত ২৪ জুন চিকিৎসকদের সংগঠন এফডিসিআর তার অপসারণ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। চিঠিতে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। সেসবের মধ্যে ছিল চিকিৎসকদের নকল মানহীন এন৯৫ মাস্ক সরবরাহ। এছাড়া করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া, ভুঁইফোড়, অভিজ্ঞতাহীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি করার মতো অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন