নাসিকের পাইকারি বাজার

২ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে খারিফ মৌসুমের কৃষিপণ্য আগাম বাজারে আসতে শুরু করেছে। পরিস্থিতিতেও দেশটির পাইকারি বাজারে কমতির দিকে রয়েছে পেঁয়াজের দাম। মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মান্দি লাসালগাঁও এশিয়ার মধ্যে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বেচাকেনার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানকার পাইকারি বাাজারে দুই সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। কুইন্টালপ্রতি দাম ৭৪০ রুপির (ভারতীয় মুদ্রা) নিচে নেমে এসেছে। সামনের দিনগুলোয় পণ্যটির দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দরপতন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ১০ তারিখে এখানকার পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজ ৯৫১ রুপিতে বিক্রি হয়েছিল। পরদিনই পেঁয়াজের দাম কুইন্টালপ্রতি ৯০০ রুপিতে নেমে আসে। একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কুইন্টালে ৫১ রুপি কমে যায়।

১২ জুন লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম আরেকটি বড় ধাক্কা খায়। দরপতন ঘটে কুইন্টালে ৪৯ রুপি। ওইদিন প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় ৮৫১ রুপি। এরপর পেঁয়াজের দাম আরো কমে যায়। দুই দিনের ব্যবধানে ১৫ জুন এখানকার পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম আরো ১০০ রুপির বেশি কমে ৭৫০ রুপিতে নেমে আসে।

এরপর কিছুটা বেড়েছিল পেঁয়াজের পাইকারি দাম। ১৮ জুন লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় কুইন্টালপ্রতি ৮০০ রুপিতে। তবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা স্থায়ী হয়নি। পরদিন প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম কমে দাঁড়ায় ৭৮০ রুপিতে। ২০ জুন তা আরো কমে কুইন্টালপ্রতি ৭৭০ রুপিতে নেমে আসে।

মাঝে একদিন বাকি রেখে ২২ জুন লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম আরো কমে দাঁড়ায় ৭৫০ রুপিতে। ২৩ জুন পণ্যটি বিক্রি হয় কুইন্টালপ্রতি ৭৪০ রুপি। এভাবে দুই সপ্তাহের কম সময়ে লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কুইন্টালে ২১১ রুপি কমে এসেছে।

স্থানীয় পাইকাররা জানান, এবারের মৌসুমে নানামুখী সংকটে পড়েছেন ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী বিক্রেতারা। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতজুড়ে লকডাউন শুরুর পর থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ চেইন অনেকটাই ভেঙে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় পণ্যটির রফতানি। এতে কৃষক থেকে শুরু করে পাইকারসবাই আর্থিক লোকসানের শিকার হন। এখন সরবরাহ চেইন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও শ্রমিক সংকট রয়ে গেছে। লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাওয়ায় নাসিকের কৃষি খাতে পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সরবরাহ চেইন পুরোপুরি চালু করাও সম্ভব হচ্ছে না।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈরী আবহাওয়া। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের কিছু অংশে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের দাপটে ক্ষেতেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ফসল বাঁচাতে আগেভাগেই অপরিপক্ব পেঁয়াজ সংগ্রহ করে ফেলেছেন। ফলে লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে যেসব পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে, তা কিছুটা অপরিপক্ব নিম্নমানের। ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে এসব পেঁয়াজ কিনতে রাজি নন। মূলত এসব কারণেই এখানকার পাইকারি বাজারে দুই সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষীরা পণ্যটির দাম না পেয়ে নতুন করে আর্থিক লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছেন। অনেক চাষী মাত্র রুপি কেজি দরে আগেভাগেই তুলে ফেলা পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

বিষয়ে লাসালগাঁওয়ের এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটির (এপিএমসি) সেক্রেটারি নরেন্দ্র ওয়াধওয়ানে বলেন, নাসিকের হাজারো কৃষক বছরে তিন ধাপে শুধু পেঁয়াজ উৎপাদন করেন। ভারতের সম্মিলিত বার্ষিক উৎপাদনের ১৬ শতাংশ পেঁয়াজ জেলার কৃষকরা এককভাবে জোগান দেন। এখানে বছরে প্রায় কোটি ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। লাসালগাঁও থেকে রফতানিও হয় প্রচুর পেঁয়াজ। এবার দরপতনের জেরে সংকটে পড়েছে এখানকার পেঁয়াজের বাজার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন