ইতালির পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট গ্রাম এখন ‘মানব ল্যাবরেটরি’

বণিক বার্তা অনলাইন

ইতালির এক বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি গ্রামে ধরা পড়েছে করোনা রোগী। সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ পুরো গ্রামটি লকডাউন করে দিয়েছে। প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে সেনাচৌকি। সেই গ্রামটি এখন হয়ে উঠেছে মানব গবেষণাগার! চিকিৎসকরা আশা করছেন, এখান থেকেই করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রক্রিয়া ও ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। 

ইতালির মধ্যযুগীয় এক গ্রাম নেরোলা। রাজধানী রোমের কাছেই লাজিও এলাকায় একটি পাহাড়ের চূড়ায় এ গ্রাম। জনসংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৯০০। এ গ্রামের বৃদ্ধাশ্রমে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়। আর চিকিৎসকরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই জনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত হয় ৭৭ জন। সবাইকে এখন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। 

এ ঘটনার পর গ্রামটি ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে বাসিন্দাদের মধ্যে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে।

নেরোলার কোনো বাসিন্দাকে তাদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে। এমনকি খাবার বা ওষুধ কেনার জন্যও বেরোনো নিষেধ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সবকিছু বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে। যদিও মেয়র সাবিনা গ্র্যানিয়েরি এটাকে একটু বাড়াবাড়িই বলছেন।

স্বাস্থ্যকর্মীরা এরই মধ্যে সব বাসিন্দার নমুনা সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যেককে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ গ্রামকে করোনাভাইরাস গবেষণার একটি কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছেন। কারণ এখানে জনসংখ্যার তুলনায় আক্রান্তের হার বেশি। তারা দেখতে চাচ্ছেন, নভেল করোনাভাইরাস একটি কমিউনিটিতে কীভাবে ছড়ায়। এ উদ্দেশ্যে এ গ্রামের সবার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোও প্রয়োগ করে দেখা হবে। তারা আশা করছেন, এখান থেকেই করোনা মহামারী সামলানোর একটা উপায় বেরিয়ে আসবে।

বলতে গেলে নেরোলা গ্রামটি ইতালির মানচিত্র থেকে সাময়িক সময়ের জন্য মুছে ফেলা হয়েছে। গ্রামের প্রবেশ পথের ল্যান্ডমার্ক ও সাইন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলেও মেয়র সাবিনা বলছেন, কেউই আমাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারবে না। আমরা এখানেই আছি এবং থাকবো। আমরা বেঁচে আছি এবং দিব্যি থাকবো। আমাদের এই ত্যাগ বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য।

করোনাভাইরাস মহামারীতে ইতালিতে মৃত্যু এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। দেশটিতে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মারা গেছেন ১৬ হাজারের বেশি, আক্রান্ত ১ লাখ ৩২ হাজারের অধিক।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন