নভেল করোনাভাইরাসে ২ জনের মৃত্যুতে আতঙ্ক মুম্বাইয়ের বস্তিতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে দুজনের মৃত্যুতে শুক্রবার এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বস্তিকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এদিকে অন্ধকার অনিশ্চয়তা দূরীভূত করতে একটি জাতীয় আলোক প্রদর্শনী আয়োজনের আহ্বান রেখেছেন চতুর্মুখী চাপে জর্জরিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর এএফপি।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে হাজার ৩০০ জন এবং প্রাণ হারিয়েছে ৫৬ জন। তবে মুম্বাইয়ের ধারাভি পাড়ায় দুটি মৃত্যু এবং তৃতীয় সংক্রমণের ঘটনায় পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া স্লামডগ মিলিয়নেয়ার-এর জন্য বিখ্যাত ধারাভি বস্তিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বাস। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষ ওই বস্তিকে আটটি কোয়ারেন্টিন অঞ্চলে ভাগ করেছে। 

মুম্বাই সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র বিজয় খাবালে-পাতিল বলেন, ওই ঘরগুলোতে অবস্থানরত মানুষজনকে নিজ নিজ ঘরে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে এবং বস্তির চতুর্দিকে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে, যাতে সেখানে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে না পারে। তিনি আরো জানান, আমরা ওই বাড়িগুলো এবং আশপাশ জীবাণুমুক্ত করতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড স্প্রে করেছি। নিয়ম মেনে ধারাভি বস্তির বাসিন্দারা নিজেদের এবং তাদের সন্তানদের ঘরের ভেতরে রাখছে। 

ঘিরে রাখা বস্তিতে শুক্রবার থেকে কাউকে বের হতে বা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। 

বুধবার ধারাভিতে কভিড-১৯ রোগে মারা যাওয়া প্রথম ব্যক্তির বয়স ছিল ৫৬ বছর। ওই ব্যক্তি বিদেশ গমনের কোনো ইতিহাস ছিল না, তবে তিনি মূত্রাশয়সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মারা গেছেন তার বয়স ৫১ বছর এবং তিনি স্যানিটেশন কর্মী র্িছলেন। তিনি মুম্বাইয়ের অন্য এলাকায় বসবাস করলেও ধারাভিতে কাজ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার এক হাসপাতালে মারা যান তিনি।

তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন এক চিকিৎসক, যিনি ওই এলাকায় কাজ করছিলেন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বস্তিবাসীদের মধ্যে কভিড-১৯ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ সেখানে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বেচ্ছা-বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা একেবারেই অসম্ভব। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, ধারাভির জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে লাখ ৭০ হাজার। এক আক্রান্তের বাড়ির বিপরীতে বসবাসকারী ৫১ বছর বয়সী ধারাভি বাসিন্দা মবিনউদ্দিন শাইখ বলেন, ভারতে ২৫ মার্চ শুরু হওয়া ২১ দিনের লকডাউন অনেকেই গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু তারাই এখন আতঙ্কিত হচ্ছেন। 

ফোনে তিনি এএফপিকে বলেন, আমরা পাঁচজনের পরিবার। আমরা যৌথ টয়লেট ব্যবহার বা সরকারি ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করি। মুহূর্তে কেবল ঈশ্বরই আমাদের রক্ষা করতে পারে। 

এদিকে ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে লকডাউন আরোপ সহজ কোনো বিষয় হিসেবে দেখা দেয়নি। অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ায় হঠাৎ করে বেকার হয়ে পড়েছে কোটিখানেক পরিযায়ী শ্রমিক। প্রায় ৫০ লাখের মতো শ্রমিক নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে, যাদের অনেকেই ফিরেছে হেঁটে। 

কেউ কেউ সংক্রমণ ঝুঁকি পাত্তা না দিয়ে সরকারি বাস ত্রাণ শিবিরগুলোতে জমায়েত হয়েছে। লকডাউন কার্যকরে পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের মতো সংস্থা। পরিযায়ী একদল শ্রমিকের ওপর হোস পাইপে করে রাসায়নিক নিক্ষেপের মতো ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। অন্য অনেক দেশের তুলনায় পরীক্ষার হার কম হওয়ায় নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সরকারি উপাত্ত নিয়ে সন্দেহ বেড়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে জাতীয় আলোক প্রদর্শনী আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। রোববার রাত ৯টার সময় বারান্দায় মোমবাতি মোবাইল ফোন ধরে চতুর্দিকে মিনিটের জন্য আলোক প্রদর্শনীর আহ্বান রাখেন মোদি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন