কৃষিতে আগাছানাশকের বিকল্প হতে পারে বিদ্যুৎ ও মাইক্রোওয়েভ ডিভাইস

বণিক বার্তা অনলাইন

রাসায়নিক আগাছনাশক এখন কৃষিজমির উর্বরতা বিনাশ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আগাছানাশকে গ্লাইফোসেট নামে একটি রাসায়নিক থাকে। ২০১৫ সাল থেকে এটির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র বলছে এতে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে। এ ঘোষণার পর গ্লাইফোসেট ভিত্তিক আগাছানাশক রাউন্ডআপ ব্যবহারের কারণে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েক হাজার মানুষ জার্মান কোম্পানি বায়ারের বিরুদ্ধে মামলা করে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্লাইফোসেট ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং চেক বিপাবলিক এ আগাছানাশক নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বহু কোম্পানি এখন বিকল্প আগাছানাশকে সন্ধানে নেমেছে। অনেকে অতীতে একটি চমৎকার প্রযুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। সেটি হলো, তড়িতাহত করে আগাছাদমন।

এ প্রযুক্তিটি প্রথম পেটেন্ট করা হয় উনিশ শতকে। ওই সময় রেললাইনে আগাছাদমনে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে আশানুরূপ সফলতা পায়নি। কারণ উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। তাছাড়া এ ডিভাইসের চেয়ে রাসায়নিক আগাছানাশক অনেক সস্তা, ব্যবহার সহজ এবং তুলনামূলক বেশি কার্যকর।

কিন্তু ক্ষতিকর আগাছার প্রজাতিগুলো ক্রমেই এসব রাসায়নিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ফলে নতুন নতুন আগাছানাশক তৈরির প্রয়োজন পড়ছে। এ কারণে বিভিন্ন কোম্পানি এখন বিকল্প আগাছানাশক খুঁজতে শুরু করেছে।

উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ দিয়ে আগাছা দমনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে- ২৫-৬০ কিলোভোল্টের বিদ্যুৎ দিয়ে অল্প সময়ের জন্য শক দেয়া। এটি আগাছা দমন, বোনা ফসল পাতলা করা এবং দ্রুত পাকানোর কাজে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে একটি তড়িৎদ্বার ১৫ কিলোভোল্টের একটি উৎসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি গাছে স্পর্শ করলে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে ওই স্থানের টিস্যু পুড়ে যায়।  যুক্তরাষ্ট্রে এ পদ্ধতিটি কৃষি খামারে আগাছাদমন, জঙ্গলের মাটিতে জন্মানো ছোট গাছ নিধন এবং রেললাইনের ঘাস নিধনের জন্য ব্যবহার করা হতো। ইউরোপেও পরীক্ষামূলকভাবে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রাসায়নিক আগাছানাশকের মতো বাণিজ্যিকভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী করতে চাইলে খামারের আকার হতে হবে ৯০০ হেক্টরের বেশি। অর্থাৎ ছোট খামারে এটি ব্যবহার করতে বেশি খরচ পড়ে যাবে।

তড়িতাহত করে আগাছা নিধনের সবচেয়ে বড় দিক হলো-  বিদ্যুতের কোনো উপজাত থাকে না, এতে ভূমিক্ষয়ের ঝুঁকি কম এবং নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ব্যবহার করা গেলে রাসায়নিরক আগাছানাশকের চেয়ে কার্যকর। 

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন নতুন একটি ডিভাইস বানিয়েছে। গ্রোওয়েভ নামে একটি কোম্পানি ভিক্টোরিয়া রাজ্যে এটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছে।  এ ডিভাইসটি রান্নাঘরে ব্যবহৃত মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মতোই কাজ করে। মাইক্রোওয়েভ যেমন খাবার গরম করার কাজে ব্যবহার করা হয় এটিও সজীব ঘাসের ভেতরে থাকা পানির কণাগুলোকে উত্তপ্ত করে, এতে সেগুলোতে তীব্র কম্পন হয়। এর ফলে আগাছর কোষপ্রাচীর ফেটে যায় এবং শেষ পর্যন্ত আগাছাটি মারা যায়। এই মাইক্রোওয়েভ মাটিকেও উত্তপ্ত করতে পারে। ফলে মাটিতে পড়ে থাকা ঘাসের বীজও এতে নষ্ট হয়। 

এই পদ্ধতিটি অন্য যে কোনো পদ্ধতির চেয়ে কার্যকর ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস ও রাত এবং বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়ার সময় প্রচলিত আগাছানাশকগুলো যখন ব্যবহার করা যায় না, গ্রোওয়েভের ডিভাইসটি তখনোও ব্যবহারযোগ্য। আর এটি সহজে বহনযোগ্যও। ফলে এ কৌশল আগামী দিনে ক্ষতিকর রাসায়নিক আগাছানাশকের জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন