ডান্সক্লাবের আড়ালে সহস্রাধিক নারী পাচার, প্রশিক্ষকসহ গ্রেফতার ৮

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে একটি অখ্যাত নাচের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের সঙ্গে যোগসাজোশে সহস্রাধিক নারী পাচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। মূলত নিম্নবিত্ত সুন্দরী নারী শ্রমিক, তালাকপ্রাপ্ত ও পারিবারিক সমস্যার শিকার তরুণীদের টার্গেট করে নাচ শিখিয়ে বিদেশে ডান্সবারে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে ফাঁদে ফেলে পাচার করে থাকে এই চক্রটি। এর আগে একবার এই চক্রের ছয়জন গ্রেফতার হলে ধরন পাল্টে ফেলে চক্রটি। নতুন রূপে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া চক্রটির নারীসহ আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী দুই তরুণীকেও উদ্ধার করা হয়েছে। 

গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, কেরাণীগঞ্জ ও মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে উদ্ধারসহ আটজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এই চক্রটির বিরুদ্ধে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সহস্রাধিক তরুণী ও নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে এই চক্রটির বিরুদ্ধে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ট্রাভেল এজেন্সি ও নাচের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ড্যান্সক্লাবের মালিকও রয়েছেন। এসময় তাদের কাছ থেকে নারীদের বিপুল পরিমান পাসপোর্ট, ভিসার ফটোকপি ও নথিপত্রসহ পাচারের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র‌্যাব-১১ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানানো হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজধানীর কাকরাইল এলাকার ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক শাহাবুদ্দিন, নারায়ণগঞ্জের একটি অখ্যাত নাচের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালিক রিজভী হোসেন অপু, পাচারকারী চক্রের এজেন্ট হৃদয় আহম্মেদ কুদ্দুস, মামুন, স্বপন হোসেন, শিপন, মুসা ও নারী সদস্য শিল্পী আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, এর আগেও নারী পাচারকারী চক্রটির ছয়জন র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে। তাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে অন্য সদস্যরা পাচারের কৌশল পরিবর্তন করে ফেলে। সরাসরি দুবাই ও মালয়েশিয়া পাচার না করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার শুরু করে তার। এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানার নিম্নবিত্ত সুন্দরী নারী শ্রমিক, তালাকপ্রাপ্ত ও পারিবারিক সমস্যার শিকার তরুণীদেরকে টার্গেট করে নাচ শিখিয়ে বিদেশে ডান্সবারে উচ্চ বেতনে চাকুরি দেবার নামে ফাঁদে ফেলে পাচার করে থাকে।


এই পাচারের মূল হোতারা হচ্ছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। তাদের সহায়তা করে থাকেন দেশের বিভিন্ন নাচের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ডান্সক্লাবের মালিক ও প্রশিক্ষকরা। গত দেড় বছরে এই চক্রটি ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের সহস্রাধিক তরুণীকে বিদেশে পাচার করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দ নজরদারিতে বিষয়টি ধরা পড়লে পাচারকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকেই আগের মামলার পলাতক আসামি। তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো এলাকা থেকে ডান্সবারে নারী পাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতারসহ পাচারের শিকার চার তরুণীকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন