সিরাজগঞ্জের শসা যাচ্ছে সারা দেশে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের উপজেলায় ৭১৩ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শসার আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পরিপক্ব শসা ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি শুরু করেছেন চাষীরা। এসব শসা কিনতে প্রতিদিন জেলার উল্লাপাড়া তাড়াশের আড়তে ভিড় করছেন ঢাকাসহ দেশের অন্য জেলার পাইকাররা। এসব হাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টন শসা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

এদিকে বর্তমানে বাজারে শসার ভালো দাম রয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকায়। আগামীতে দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

স্থানীয় শসাচাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর শসার ফলন কম হয়েছিল। বাজারেও দাম পাওয়া যায়নি। এজন্য শসা চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছিল চাষীদের। তবে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। দামও এখন পর্যন্ত ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই গত বছরের লোকসান এবার কাটানো যাবে বলে মনে করছেন শসাচাষীরা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ সদর উপজেলাসহ জেলায় চলতি বছর ৭১৩ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। তবে তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম, তালম, সগুনা, নঁওগা বারুহাস উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাতী, বড়পাঙ্গাসী, উধুনিয়া, কয়ড়া, দুর্গানগর এবং লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোয় শসা আবাদ বেশি হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ক্ষেত থেকে শসা তুলে জেলার উল্লাপাড়ার কয়ড়া ইউনিয়নের বর্ধনগাছা চাকসা করম আলীর শসার আড়তে আনেন কৃষকরা। এখান থেকে শসা কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। প্রতিদিন দুই আড়ত থেকে গড়ে ৪০০ টন শসা ঢাকা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, যশোর, নোয়াপাড়া, দৌলাদপুর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া রাখালগাছা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর প্রতি মণ শসা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে, যার কারণে লোকসান গুনতে হয়েছিল। চলতি বছর নয় বিঘা জমিতে শসার আবাদ করেছি। ফলন দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশাবাদী তিনি।

একই উপজেলার খাদুলি গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমিতে শসার আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে, তাছাড়া প্রথম থেকেই দাম ভালো পেয়েছি। গত বছর শসা আবাদে তেমন লাভ হয়নি। বছর দাম ভালো পওয়ায় গত বছরের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নেয়া যাবে।

শসা ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, চলতি বছর কৃষক শসার দাম ভালো পেয়েছেন। বাজার ভালো থাকায় আমরাও বাজারে শসা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি।

তিনি বলেন, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, যশোর, নোয়াপাড়া, দৌলাদপুর খুলনার বিভিন্ন জেলায় উল্লাপাড়ার শসার চাহিদা ভালো রয়েছে। তাই আমরা সরাসরি এসব আড়ত থেকে শসা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন জানান, শসার আবাদ হয় মূলত সিরাজগঞ্জের দুই উপজেলা তাড়াশ উল্লাপাড়ায়। মোট আবাদের ৯০ ভাগ হয় দুই উপজেলায়। গত বছর সিরাজগঞ্জে ৬৮৩ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর ৩০ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ বেড়েছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুর হক বণিক বার্তাকে বলেন, শসা আবাদে তুলনামূলক খরচ কম লাগে। এজন্য প্রতি বছরই জেলার শসার আবাদ বাড়ছে। বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় শসার ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া দেশে সিরাজগঞ্জের শসার চাহিদা বেশি। তাই বাজারে দামও ভালো যাচ্ছে। আশা করছি, গত বছরের লোকসান এবার ঘুচাতে পারবেন শসাচাষীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন