অস্টিওপোরোসিস হাড়ের একটি রোগ। এ
রোগের কারণে হাড় দুর্বল ও ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ মানুষ এ
সমস্যায় ভুগে থাকে। বিশেষ করে নারীদের এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে রোগটি
ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হূদরোগসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগের মতোই দেখছেন চিকিৎসকরা। এ রোগের
সুনির্দিষ্ট করে লক্ষণ বলা কঠিন। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে, যেমন
সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করা,
হাড়ে ব্যথা হওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ
সমস্যাগুলো বাড়ে। তখন বুঝতে হবে হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে। অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি
রয়েছে।
বিভিন্ন কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। তার
মধ্যে ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত কারণ একটি। ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের অভাবে হাড়ের গঠন সঠিক
ও মজবুত হয় না। ফলে একটা পর্যায় গিয়ে এটা তীব্র আকার ধারণ করে। অস্টিওপোরোসিস রোগ
দেখা দেয়। এ কারণে জন্মের পর থেকেই চিকিৎসকরা ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়ার
পরামর্শ দেন। চিকিৎসকদের মতে,
জন্মের পর যেগুলো আমরা হাড় বলি, সেগুলো
আসলে তরুণাস্থি। এ তরুণাস্থিকে হাড়ের গঠন দিতে ভিটামিন ডি ভূমিকা রাখে। এছাড়া
খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে পরিবর্তন,
নিয়মিত ব্যায়াম না করার কারণেও হাড়ের এ রোগ হয়ে
থাকে। আজকাল মানুষ ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ব্যয়াম করে না। কিন্তু মানব শরীরের
বিভিন্ন হাড় ভালো রাখতে ব্যয়ামের গুরুত্ব নেহাতই কম নয়।
সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে
ভিটামিনের অভাব, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের পরিবর্তন ছাড়াও পরিবেশগত কারণে হাড়ের সমস্যা হয়ে থাকে।
তীব্র বায়ুদূষণের কারণে বয়ঃপ্রাপ্তদের অস্টিওপোরোসিস দেখা দেয়। বার্সেলোনা
ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা, যেটা
জামা নেটওয়ার্কে প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এ সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, বাতাসের
ঘনত্ব নিম্নমানের হওয়ার কারণে বয়স্কদের হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়।
ভারতের হায়দরাবাদ শহরের নিকটবর্তী
এলাকার ২৮টি গ্রামের ১ হাজার ৭১১ নারীসহ ৩ হাজার ৭১৭ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর
গবেষণাটি করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের হাড়ের স্বাস্থ্য ও জীবনযাপন বিশ্লেষণ করে এ
ফলাফল পাওয়া গেছে। রান্নার সময় তারা কোন ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে, এ
প্রশ্নও তাদের করা হয়েছিল। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাতাসের ঘনত্ব ও হাড়ের
সমস্যার মধ্যকার সংযোগ খুঁজে বের করা। বিশেষ করে কোমরের অংশের মেরুদণ্ড ও বামদিকের
হিপবোনে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা তা দেখা।
বায়ুদূষণের কারণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস
ও প্রদাহ দেখা দেয়। এ কারণে অস্টিওপোরোসিস হয় বলে গবেষকরা বলছেন। বাতাসে কার্বন
ডাই-অক্সাইড
ও বেশকিছু ক্ষতিকর সূক্ষ্ম কণা থাকে। যেমন গাড়ির কালো ধোঁয়ার মধ্যে ক্ষতিকর অনেক
পদার্থ থাকে, যা শরীরের জন্য মারাত্মক। কার্বন ডাই-অক্সাইড ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো
নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে ফুসফুসে যায়,
সেখান থেকে পুরো মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায়
অংশগ্রহণকারী সবারই বায়ুদূষণের অভিজ্ঞতা ছিল এবং দেখা যায়, তাদের
সবারই হাড়জনিত কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। এ গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, উচ্চ, মধ্যম
ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় বায়ুদূষণের পরিমাণ অধিক। ফলে এসব দেশের মানুষের এ রোগের
ঝুঁকিও অনেক বেশি।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে