ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির একটি চামড়াজাত পণ্যের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। জীবিত উদ্ধার ৫৮ জনের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকের অবস্থা গুরুতর। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। হতাহতদের অধিকাংশই ওই কারখানার শ্রমিক বলে জানা গেছে। খবর এএফপি ও এনডিটিভি।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দিল্লি শহরের রানী ঝাঁসি সড়কের একটি পুরনো বহুতল ভবনে অবস্থিত চামড়াজাত পণ্যের ওই কারখানায় আগুন লাগে। ওই সময় কারখানার ভেতরে বহু শ্রমিক ঘুমাচ্ছিলেন। ধোঁয়া ও আগুন দেখতে পেয়ে পুলিশ ও দমকলে খবর দেয় স্থানীয়রা, তারা উদ্ধারকাজেও অংশ নেয়।
দমকল বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৫টা ২২ মিনিটে স্থানীয়দের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১৫টি গাড়ি। পরে আরো ১৫টি গাড়ি পাঠানো হয়। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
নয়াদিল্লি দমকলের উপপ্রধান সুনীল চৌধুরী এএফপিকে জানান, ৬০০ বর্গফুট এলাকার ওই ভবনটিতে আগুন লাগে। ভেতরে খুব অন্ধকার ছিল। কারখানাটিতে স্কুল ব্যাগ ও অন্যান্য দাহ্য বস্তু মজুদ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে দম বন্ধ হয়ে। আহত ও অসুস্থ অবস্থায় অনেককে উদ্ধার করে এলএনজেপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের। আশঙ্কাজনক আরো বেশ কয়েকজন। অন্তত ৫৮ জনকে তারা জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর উপপ্রধান আদিত্য প্রতাপ সিং সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ভবনে তল্লাশির সময় তারা প্রচুর কার্বন মনোক্সাইড (সিও) গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলাজুড়ে এ গ্যাসের মাত্রা ছিল অতিউচ্চ। গন্ধ ও বর্ণহীন এ গ্যাসকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করলে যেকোনো প্রাণী দ্রুত অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ওই কারখানায় গাদাগাদি করে ঘুমাতেন প্রচুর শ্রমিক। তাদের অনেকেই আবার আশপাশের কারখানায় কাজ করেন। এসব শ্রমিক উপার্জনের আশায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসেন। খরচ বাঁচিয়ে পরিবারের জন্য টাকা জমাতে তাদের অনেকে রাতযাপন করেন কর্মস্থলেই।
দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অতুল গার্গ বলেন, ওই কারখানাটির প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এনডিটিভি জানিয়েছে, আশপাশের ভবনগুলোতেও এমন অবৈধ কারখানা ও ওয়ার্কশপ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের মালিক মোহাম্মদ মাসিহ বলেছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটির মালিক তার ভাইয়েরা। ব্যাগ, প্রিন্টিং পেপার ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন কারখানার জন্য সেটি ভাড়া দেয়া হয়েছিল। ভবনে কয়েকশ শ্রমিক থাকতেন।
এদিকে ভবনের মালিক দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে এক ভাই রেহানকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। বাকিজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ
