পিটার হান্ডকের বিতর্কিত নোবেলপ্রাপ্তির বিরুদ্ধে মিছিল, প্রত্যাহারের দাবি

সুইডিশ একাডেমি হান্ডকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে

সুইডিশ একাডেমি চলতি বছর সাহিত্যে পিটার হান্ডকেকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে, তাদের বক্তব্য, ‘স্পষ্টতই কোনো যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধ অপরাধ কিংবা গণহত্যাকে অস্বীকারকারী এমন কাউকেই পুরস্কৃত করার অভিপ্রায় ছিল না। কিন্তু সংবাদমাধ্যম থেকে এখন এ রকম প্রতিক্রিয়াই আপনি পাবেন।

সুইডিশ পত্রিকা দগেন নিহেতারে একাডেমি সদস্য ম্যাটস মাল্ম ও এরিক এম রুনিসন এক লেখায় স্বীকার করেছেন যে, হান্ডকেঅবশ্যই ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো, অসংগত ও ধোঁয়াশাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন রাজনৈতিক ইস্যুগুলোয়,’ (সুইডিশ ভাষা থেকে বিবিসির অনুবাদ মতে), তার পরও তারা একাডেমির সিদ্ধান্তের পক্ষেই সাফাই হিসেবে বলছেন, ‘তার লেখায় এমন কিছু পাওয়া যায়নি, যা সুশীল সমাজ কিংবা মানুষের সমতার অধিকারকে আক্রমণ করেছে,’ উল্টো প্রশ্ন রাখা হয়েছে: ‘আমরা বিস্মিত হচ্ছি, সমালোচকরা কোন সূত্রের ভিত্তিতে সমালোচনা করছেন আর হান্ডকের নিজের বক্তব্যকে কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে।

হান্ডকেকে পুরস্কারের জন্য বেছে নেয়ায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে এবারের সাহিত্যের নোবেল, কারণ অস্ট্রীয় এ লেখক বলকান যুদ্ধে সার্বিয়ার নৃশংসতার অস্বীকারকারী এবং যুদ্ধাপরাধী স্লোবোদান মিলোসেভিচের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণকারীদের একজন। হান্ডকে ১৯৯৬ সালে আ জার্নি টু দ্য রিভারস: জাস্টিস ফর সার্বিয়া গ্রন্থে ১৯৯৫ সালে সেব্রেনিকায় সংঘটিত গণহত্যাকে অস্বীকারের চেষ্টা করেছেন। ২০০৬ সালে প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে জানা যায়, একজন সমালোচক হান্ডকেকে সার্ব নৃশংসতার প্রমাণ হিসেবে মরদেহের কথা উল্লেখ করেন, এ অস্ট্রীয় লেখক তখন জবাবে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন (ইংরেজি অনুবাদে), ‘You can stick your corpses up your arse.’

বসনিয়ান-আমেরিকান লেখক আলেক্সান্দার হেমন হান্ডকেকে বর্ণনা করেছেনগণহত্যার পক্ষে কৈফিয়ত খাড়াকারীদের বব ডিলান বলে। হান্ডকের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানিয়ে ৩৮ হাজারের বেশি লোক আবেদন জানিয়েছেন। দ্য চ্যারিটি রিমেম্বারিং সেব্রেনিকার পক্ষ থেকে এ পুরস্কারকে উল্লেখ করা হয়েছেজাতিগত ও ধর্মীয় ঘৃণা, সার্বিয়ান জাতীয়তাবাদ ও গণহত্যার অস্বীকারকে সমর্থন হিসেবে।

সাহিত্যের নোবেল কমিটির দুই সদস্য হেনরিক পিটারসেন আর রেবেকা কারদিও নোবেলের এ সিদ্ধান্তের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। পিটারসেন আর কারদি সুইডিশ একাডেমির অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রার্থীর মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ও সুপারিশ করে থাকেন। সুইডিশ পত্রিকা স্বেসস্কি ডগব্লাদেতের কাছে হান্ডকেকে তারা বর্ণনা করেছেনস্বদেশবিরোধী শান্তিকামী হিসেবে (এএফপির অনুবাদে)

৫০ বছরে... বেকেটের মতো পিটার হান্ডকেও হবেন একাডেমির সেরা পছন্দের একজন, আমি নিশ্চিত,’ লিখেছেন হেনরিক পিটারসেন।

তিনি হান্ডকের পক্ষে যুক্তি খাড়া করে তাকে লেখালেখিতে পুরোই একজনআপাদমস্তক অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করতে চেয়েছেন এবং বলছেন, তার সার্বদের সমর্থন করাকে ভুল বোঝা হয়েছে। তার যুক্তির মূল অভিঘাত ছিল সার্বিয়ান দৃষ্টিভঙ্গিকে হাজির করা, যা জার্মান ও অস্ট্রিয়ান সংবাদমাধ্যমে অনুপস্থিত।

দগেন নিহেতারে কারদিসন্দেহাতীতভাবে বলা ও করা হান্ডকের প্রবল বিদ্বেষপূর্ণ কার্যক্রমের জন্য কোনো রকম দুঃখপ্রকাশের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, নোবেল কমিটি পরিষ্কারভাবেই মনে করে সেনিশ্চিতভাবেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে

নোবেল ঘোষণার পর হান্ডকে তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিপুল প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে নিজেই ঘোষণা করেছেন, তিনি আর কোনোদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।আমি আমার বাগানে দাঁড়িয়ে আছি, ৫০ জন সাংবাদিক উপস্থিততারা সবাই আমাকে এ ধরণের প্রশ্ন করছে, তুমি এই করেছ... তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও পাইনি যারা আমার বই পড়েছে কিংবা জানে আমি কী লিখেছি,’ গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়ান প্রচারমাধ্যম ওআরএফের কাছে বলেছেন তিনি।খালি এ রকম প্রশ্ন, বিশ্ব কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। খালি প্রতিক্রিয়া থেকে প্রতিক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়া। আমি একজন লেখক, আমি এসেছি তলস্তয় থেকে, হোমার থেকে, সারভেন্তেস থেকে। আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও, আর এ রকম প্রশ্ন করবে না আমাকে।

 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন