সত্তরোর্ধ্ব রাবেয়া বেগম, আগে থাকতেন গোয়ালঘরের এক কোণে বাঁশের তৈরি মাচায়। এখন তার আছে লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি টিনের ঘর। তার ভাষায়, ‘নয়া ঘর দিয়ে হামাক নতুন জীবন দিছে।’ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ‘নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ কর্মসূচির আওতায় তৈরি ঘর পেয়ে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলির আলীহাট ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের এ বাসিন্দা। হাকিমপুর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ কর্মসূচির আওতায় পুরো উপজেলায় ৭৩ জন গৃহহীন ব্যক্তিকে ঘর ও ১০ জন অসহায় ব্যক্তিকে পণ্যসহ দোকান তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এরা সবাই হতদরিদ্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাবেয়া
বেগমের স্বামী মারা গেছে ২৭ বছর আগে। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তবে কারো আর্থিক
অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় ছোট ছেলের গোয়ালঘরেই থাকতে হতো তাকে। ঘরটির পশ্চিমের
একটি অংশ ভেঙে গেছে দুই বছর আগে। তাই বৃষ্টি হলেই গরুর পাশে বসে নির্ঘুম রাত
কাটাতে হতো রাবেয়া বেগমকে।
রাবেয়া বেগমের এ দুর্দশার কথা জানতে
পেরে ‘নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ কর্মসূচির আওতায় তাকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ১৫
সেপ্টেম্বর তাকে নতুন ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়। সেসঙ্গে দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত
শৌচাগার। ফলে আর গোয়ালঘরে থাকতে হচ্ছে না রাবেয়া বেগমের।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নতুন
ঘরে নাতিদের নিয়ে শুয়ে রয়েছেন রাবেয়া বেগম। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘নয়া
ঘর হামাক নতুন জীবন দিছে। নয়া ঘরোত আসে শেষ জীবনোত জিউটা এনা শান্তি পাইছে। অসুখ-বিসুখ সব
পালাইছে।’
রাবেয়া বেগমের মতো ঘর পেয়েছেন একই
গ্রামের জহুরা বেগম। আগে থাকতেন তিনি ছাপড়া দিয়ে তৈরি ঘরে। নতুন ঘর পেয়ে তিনি বলেন, ‘খুব
কষ্ট করে মানুষের জায়গায় থাকছি। সরকার হামাক ঘর করে দিছে। সেই ঘর পায়ে আমার জীবনটা
সুখে-শান্তিতে
ভরে উঠেছে।’
বোয়ালদাড় গ্রামের সেলিনা আকতার নামে
আরেক নারী জানান, আগে ভাঙা ঘরে ছেলেদের নিয়ে কষ্ট করে থাকতে হতো তাকে। এখন ঘর পেয়ে তিনি
সংসার গুছিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
কর্মসূচির আওতায় দোকান তৈরি করে দেয়া
হয়েছে হিলির পাউশগাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামকে। তিনি জানান, দোকানের
বেচাকেনা দিয়ে এখন ভালোভাবেই দিন কাটছে তার।
এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন,
কর্মসূচির আওতায় হাকিমপুর উপজেলার ৭৩ জন গৃহহীন
ব্যক্তিকে নতুন ঘর দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ জন অসহায় ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে পণ্যসহ
দোকান। হাজারো অসহায় লোকের মাঝে এই ৮৩ জনকে বেছে নেয়াই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ।
তিনি বলেন, ঘর
ও দোকান পাওয়া ব্যক্তিদের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। আরো যারা গৃহহীন রয়েছে, তাদেরও
পর্যায়ক্রমে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।