আধুনিক
‘কক্সবাজার’ নামটি যার নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তিনি হচ্ছেন ‘হিরাম কক্স’। তিনি ১৭৫৯
খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে) স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা মেরি ছিলেন আলেকজান্ডার ফ্রেজারের কন্যা, যার প্রমাতামহ ছিলেন অষ্টম লর্ড লোভেটা। পিতা হেনরি চেম্বাস মারভে কক্স কিউ ভি। পড়ালেখার
পাঠ চুকিয়ে তিনি ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর ক্যাডেট
হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে আসেন এবং ১৮ সেপ্টেম্বর কমিশন
লাভ করেন। কমিশন লাভের পর থার্ড বেঙ্গল
ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের পদাতিক বাহিনীতে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে লেফটেন্যান্ট
পদে পদোন্নতি পান এবং ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব ঘাড়ের ওপর চাপার পরেই তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন। ১১
এপ্রিল, ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দ। চিন্তাভাবনা না করেই তিনি
হুট করে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ইংল্যান্ড ফিরে যান। এবার বিয়ে করে সংসারী হওয়ার চেষ্টা করলেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ডে
পাঁচ-পাঁচটি বছর পেরিয়ে গেল, ছেলের বাবা হলেন। এবার ইংল্যান্ডের চেনাজানা পরিবেশে তিনি হাঁপিয়ে উঠলেন। আবার সাত সাগর, তেরো নদী পাড়ি দিয়ে ভারতবর্ষে ফিরে এলেন। ফিরে এলেন সেই চিরচেনা পুরনো ডেরায়। ২৯
অক্টোবর ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ। আগে ছেড়ে যাওয়া চাকরিতে যোগ দিলেন। পুনরায় থার্ড বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টে লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করলেন। ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দিল এবং ব্যাটালিয়ন ক্যাপ্টেন নিযুক্ত করল। কিন্তু এই পদে তার
বেশি দিন থাকা হলো না। তার
রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাকে কূটনৈতিক দায়িত্বে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাকে বার্মায় কোম্পানির আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করে। পূর্ববর্তী ক্যাপ্টেন সাইমস মিশনের সাফল্য সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং বার্মা সরকারের সঙ্গে কোম্পানির সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক নিশ্চিত করার জন্যই ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নেতৃত্বে বার্মায় পরবর্তী মিশন প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে বার্মায় ক্যাপ্টেন কক্সের নিয়োগ ছিল কোম্পানির একজন রেসিডেন্টের, রাষ্ট্রদূতের পদে নয়। মিশনটির উদ্দেশ্য ছিল মূলত তিনটি। প্রথমত, বার্মা ও বাংলার মধ্যে
বিদ্যমান সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতি সাধন করা। দ্বিতীয়ত, বার্মায় বাণিজ্যরত ব্রিটিশ নাগরিকদের স্বার্থ ও সুবিধার প্রতি
সতর্ক দৃষ্টি রাখা। সবশেষে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে বার্মায় ফরাসি প্রভাব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা। এছাড়া বার্মা সম্পর্কে ক্যাপ্টেন সাইমস কর্তৃক সংকলিত বিবরণের অবশিষ্টাংশ প্রণয়নের দায়িত্বও ক্যাপ্টেন কক্সকে দেয়া হয়। এ পর্যায়ে বার্মার
অভ্যন্তরীণ শাসন, শিল্পকলা, বাণিজ্য, সাহিত্য ও ভৌগোলিক বিষয়গুলো
অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। উদ্দেশ্যটি স্পষ্টতই ব্রিটিশদের সামরিক তৎপরতার অগ্রবর্তী গুপ্তচরবৃত্তির অংশ ছিল। কলকাতায় একজন বর্মি রাষ্ট্রদূত প্রেরণের জন্য বর্মিরাজকে উত্সাহী করে তোলার নির্দেশও ক্যাপ্টেন কক্সকে দেয়া হয়। বাণিজ্য প্রসঙ্গে রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে
তাকে কয়েকটি বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ
করতে হয় যে ক্যাপ্টেন
সাইমস বার্মায় কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। তার কারণেই বার্মার সঙ্গে কোম্পানির মধ্যে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেন সাইমস কলকাতা ফিরে গভর্নর জেনারেলের কাছে ঠিক উল্টো বিবরণ প্রদান করেন। এতে গভর্নর জেনারেল তথা কোম্পানি প্রকৃত অবস্থা থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল। ঠিক সেই নাজুক সময়ে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে বার্মায় কোম্পানির আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। একজন
দোভাষী, কয়েকজন কেরানি ও ভৃত্য, একজন
হাবিলদার ও নায়েকসহ ১২
জন সিপাহির একটি ক্ষুদ্র দেহরক্ষী দল নিয়ে ক্যাপ্টেন
সিম্পসন পরিচালিত কোম্পানির জাহাজ ‘সোয়ালো’র মাধ্যমে ক্যাপ্টেন
কক্স ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর রেঙ্গুন
পৌঁছান। রেঙ্গুন পৌঁছে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করে কোম্পানির প্রাক্তন প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন সাইমসের স্থলাভিষিক্ত হন। প্রকৃতপক্ষে
ক্যাপ্টেন কক্সের রেঙ্গুন বন্দরের সহকারী কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আগেই একটি ঘটনা কোম্পানির মিশনের প্রতি বর্মিদের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটায়। ঘটনাটি ছিল বর্মি রাজা কর্তৃক কোম্পানির কাছে আরাকানে অরাজকতার অপরাধে অভিযুক্ত কয়েকজন সর্দার ও তাদের পরিবারবর্গের
প্রত্যর্পণ দাবি। উল্লেখ্য যে সর্দারদের প্রত্যর্পণ
দাবি ছিল ক্যাপ্টেন সাইমসের কাছে বর্মিরাজের চিঠিতে উল্লে-খিত বক্তব্যেরই প্রতিফলন। ভারতের গভর্নর জেনারেল জন শোর বর্মিরাজের
এ দাবি অযৌক্তিক মনে করে প্রত্যাখ্যান করেন। অবশ্য এ বিষয়ে তিনি
বর্মিদের সব বক্তব্য বার্মায়
কোম্পানির রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন কক্সের কাছে পেশ করার অনুরোধ জানান। এখানে
উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর বার্মা রাজা বোধপায়া স্বাধীন আরাকান আক্রমণ করেন এবং ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ দখলে নেন। বর্মি রাজার সেনাপতি মহাবান্দুলার নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের ফলে
প্রায় এক লাখ আরাকানি
কক্সবাজারের রামু, ঈদগাঁহ, চকরিয়া, মহেশখালী, উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারিত আরাকানিরা প্রাক্তন রাজবংশের ওয়েসো নামে জনৈক বংশধরকে রাজা হিসেবে মনোনীত করে বর্মি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বর্মিরা এই বিদ্রোহ দমন
করে। এরপর অত্যাচার আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। এ সম্পর্কে লেফটেন্যান্ট
কর্নেল ইরাঙ্কিন বলেন, ‘বর্মিরা বিজিত ও নিরীহদের ওপর
অত্যাচারের জন্য দায়ী। আমার আদৌ সন্দেহ নেই যে হাজার হাজার
নর-নারী ও শিশুকে সুস্থ
মস্তিষ্কে হত্যা করা হয়েছে।’ এ
ঘটনার পর আরাকানের আর
এক অমাত্যের সন্তান সিনপিয়ান (ব্রিটিশরা তাকে কিং বেরিং নামে ডাকে) আরাকানের হূত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে দেশপ্রেমিক আরাকানিদের সংগঠিত করেন এবং একাধিকবার বর্মি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে বর্মি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন। এ কারণেই বর্মিরাজ
আরাকানি সর্দারকে তাদের হাতে প্রত্যর্পণের দাবি জানান। ক্যাপ্টেন
হিরাম কক্স দীর্ঘ চার মাস রেঙ্গুনে অনেক দৌড়-ঝাঁপ করে অবশেষে লুট্টর তিনজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী তথা হানসাওয়াদির মিথোউন এবং রেঙ্গুনের ইয়েউনের সাহায্যে ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারি বর্মিরাজের
সাক্ষাৎ লাভে সক্ষম হন। এই সময় ক্যাপ্টেন
কক্স বর্মিরাজের কাছে তিনটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি তিনটি ছিল কোম্পানির প্রতিনিধির কূটনৈতিক অধিকার, বাণিজ্যিক স্বার্থ ও ফরাসি তৎপরতাসংক্রান্ত।
কোম্পানির প্রতিনিধির কূটনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত স্মারকলিপিতে ক্যাপ্টেন কক্স নিম্নোক্ত দাবিগুলো পেশ করেন। প্রথমত, কোম্পানির এজেন্ট বার্মার আইনের এখতিয়ারের বহির্ভূত এবং তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ কলকাতা
কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত,
কোম্পানির এজেন্টকে রেঙ্গুনে অফিস, বাসগৃহ নির্মাণের অধিকার দিতে হবে। এছাড়া এজেন্ট ও তার লোক-লস্করদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ হবে সর্বপ্রকার শুল্কমুক্ত। তৃতীয়ত,
ব্রিটিশ এজেন্ট তার নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী রাখতে পারেন, তবে দেহরক্ষীর সংখ্যা বর্মি সরকার নির্ধারণ করবেন। সবশেষে
কোম্পানির এজেন্ট বর্মিরাজ ও রাজবংশের সদস্যদের
কাছে অবাধ গমনাগমন করতে পারবেন। এছাড়া ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সব যোগাযোগ কোম্পানি
এজেন্টের মাধ্যমে করতে হবে। বাণিজ্যিক
স্বার্থসংক্রান্ত স্মারকলিপিতে ক্যাপ্টেন কক্স বর্মিরাজের কাছে যেসব দাবি পেশ করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো—১. বাণিজ্যিক উন্নতির
জন্য মুদ্রার প্রচলন, ২. রেঙ্গুনের জাহাজের
ওপর শুল্ক হ্রাস, ৩. রেঙ্গুনে বন্দরে
দ্রব্যাদি পরীক্ষা করার আপত্তিকর পদ্ধতির বিলোপ, ৪. আমদানি শুল্ক
হ্রাস করে ৫ শতাংশে স্থিতিশীলকরণ,
৫. বর্মি বণিকদের কাছ থেকে বকেয়া দাবি আদায়ে বর্মি সরকারের আইন ও প্রশাসনিক বিভাগের
সাহায্যে, ৬. সমুদ্রের মধ্যে
ব্রিটিশ নাগরিকদের জাহাজসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ বর্মি সরকারের বিচারের এখতিয়ারভুক্ত না হওয়া, ৭.
উভয় দেশের বণিকদের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের মীমাংসা উভয় পক্ষের প্রতিনিধির মাধ্যমে সম্পাদন করা, ৮. দ্রবাদি ক্রয়
ও বিক্রয়ে ইংরেজ বণিকদের বার্মায় যথেচ্ছ গমনাগমনের সুবিধা, ৯. ব্রিটিশ জাহাজগুলোর
যাত্রী ও নাবিকদের জন্য
বার্মা থেকে তিন মাসের রসদ সংগ্রহের অনুমতি, ১০. বার্মায় কোনো ব্রিটিশ বণিকের মৃত্যু হলে তার সমুদয় সম্পত্তি কোম্পানির এজেন্টের কাছে হস্তান্তরকরণ এবং ১১. বন্দরে শুল্ক পরিশোধ করার পর কোম্পানির জাহাজ
বিলম্ব না করানো। বর্মিরাজের
কাছে উপস্থাপিত ক্যাপ্টেন কক্সের তৃতীয় স্মারকলিপি ছিল বার্মায় ফরাসিদের প্রভাব সম্পর্কে। ক্যাপ্টেন কক্স দাবি করেন যে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে
কোম্পানি কর্তৃক তিনজন আরাকানি সর্দারকে বর্মিদের হাতে এ শর্তে অর্পণ
করা হয়েছিল যে বর্মি সরকার
ইংরেজদের শত্রুদের বিশেষত ফরাসিদের বার্মায় আশ্রয় দেবে না এবং ফরাসি
জাহাজগুলোকে মেরামত বা লুণ্ঠিত দ্রব্য
খালাস করার জন্য বর্মি বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। ওই শর্তানুযায়ী ক্যাপ্টেন
কক্স দাবি করেন যে কোনো ফরাসি
জাহাজ বর্মি বন্দরে অবতরণ করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
তাকে বন্দর ত্যাগ করার নির্দেশ দিতে হবে, অন্যথায় জাহাজটি বাজেয়াপ্ত করা হবে। তিনি আরো উল্লে¬খ করেন যে
বর্মি কর্মচারী বা প্রজারা ফরাসি
জাহাজকে কোনো রসদ বা অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ
করতে পারবেন না। অবশেষে
ক্যাপ্টেন কক্সের স্মারকলিপি লুট্টর রাজদরবারে আলোচিত হয়। আলোচনার সময় বর্মি মন্ত্রীরা কিছু অপ্রত্যাশিত সুপারিশ করেন। প্রথমত, চট্টগ্রামে আশ্রিত আরাকানি উদ্বাস্তুদের প্রত্যর্পণের জামিনস্বরূপ রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন কক্সকে বার্মায় আটক রাখা হোক। দ্বিতীয়ত, বাংলার চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ ও ঢাকা প্রভৃতি
অঞ্চল বর্মি সরকারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য কোম্পানির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হোক। উল্লেখ্য যে একত্রে বর্মি
মন্ত্রীরা ঐতিহাসিক কারণ দর্শিয়ে এই অঞ্চলসমূহ আরাকানিদের
অধিকারভুক্ত বলে গণ্য করেন। অবশ্য পরে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
করে ঢাকার অর্ধেক অংশ দাবি করার বিকল্প সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপ্টেন কক্স ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। তিনি গভর্নর জেনারেলকে জানান, ‘অল্পকালের মধ্যে আমার কোনো চিঠি না পেলে ধরে
নেবেন যে আমি অন্তরীণাবদ্ধ
ও সকল প্রকার যোগাযোগ বর্জিত।’ ক্যাপ্টেন কক্স এ সময় বর্মিদের
সামরিক প্রস্তুতির কথা কোম্পানিকে অবগত করান। তিনি জানান যে বর্মি সরকার
আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম ও আসাম সীমান্তে
২০ হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে। এছাড়া ১০ হাজার সৈন্যের
একটি দল রেঙ্গুন ও
পেগুর নিরাপত্তার জন্য বার্মার দক্ষিণাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। এ সময় ক্যাপ্টেন
কক্স বার্মা সম্পর্কে ক্যাপ্টেন সাইমস প্রদত্ত বিবরণের তীব্র সমালোচনা করেন। কক্সের মতে বার্মা সম্পর্কে ক্যাপ্টেন সাইমসের অতিরঞ্জিত কাহিনী কোম্পানিকে বর্মিদের প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে এবং পরিণামে এ ব্যবস্থা কোম্পানিকে
ভুল পথে পরিচালিত করতে বাধ্য করেছে। দুটি জনশ্রুতি কোম্পানির প্রতি বর্মি সরকারের বিরূপ মনোভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ জনশ্রুতি দুটি
হলো মিনগুনের প্যাগোডা নির্মাণে বার্মা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী। এ ঘটনার আগে
বার্মার ধাতু নির্মিত নতুন মুদ্রা প্রবর্তন করা হবে বলে জনৈক ফুঙ্গি আরো একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেন। উল্লে¬খ্য, কিছুদিন আগে বর্মিরাজ বোধপায়া ধাতু নির্মিত নতুন মুদ্রা প্রবর্তন করেন এবং ক্যাপ্টেন কক্স তাকে কিছু মুদ্রা ও একটি মুদ্রাযন্ত্র
উপহার দিয়েছিলেন। নতুন মুদ্রা প্রচলনের ফলে বার্মার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এ অবস্থাকে নতুন
মুদ্রা প্রবর্তনজনিত ফল হিসেবে গ্রহণ
না করে শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন কক্সকেই তাদের দুর্গতির জন্য দায়ী করা হয়। এছাড়া আসামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বার্মা ও বাংলার পরস্পরবিরোধী
ভূমিকা কোম্পানির প্রতি বর্মিদের বাকি আন্তরিকতাও লুপ্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৭৯৭
খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে রাজপ্রাসাদে একটা ঘটনা কক্সকে নতুন করে অনুকূল পরিবেশের প্রত্যাশায় আশান্বিত করে তোলে। ক্যাপ্টেন কক্সের প্রত্যক্ষ বিরুদ্ধাচরণকারী মিইন উনজি বর্মি সভাসদের সহায়তায় বর্মিরাজ বোধপায়াকে উত্খাত করে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত করে ব্যর্থ হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপ্টেন কক্স পুনরায় বর্মিরাজের কাছে তার দাবিগুলো উত্থাপন করেন। কিন্তু তার দাবিগুলো প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তিনি
১৭ অক্টোবর অমরাপুরা ত্যাগ করে নৌকাযোগে ১ নভেম্বর রেঙ্গুন
পৌঁছান। রেঙ্গুনেও ক্যাপ্টেন কক্সকে এক বিরুদ্ধ পরিস্থিতির
সম্মুখীন হতে হয়। হানসাওয়াদির মিয়োউন ক্যাপ্টেন কক্সকে অনতিবিলম্বে অমরাপুরায় প্রত্যাবর্তনের জন্য নির্দেশ জারি করেন। প্রকৃতপক্ষে এ নির্দেশের অর্থ
ছিল রেসিডেন্টের গতিবিধি সীমাবদ্ধ করা। রেঙ্গুন
ও অমরাপুরায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্মি সরকার রেঙ্গুনে কোম্পানির রণতরীর আক্রমণের আশঙ্কা করে এবং আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ক্যাপ্টেন কক্স জানান, বিনা অনুমতিতে কোনো জাহাজ রেঙ্গুন নদী বেয়ে যাতে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য
রেঙ্গুনের কাছে বর্মি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ সময় রেসিডেন্ট
ক্যাপ্টেন কক্স বার্মার সঙ্গে বাংলার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক ও কর্মপন্থা সম্পর্কে
গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি কোম্পানিকে জানান, অতীত অপমানের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যৎ আক্রমণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ছাড়া অন্য কোনো শর্তে এদের সঙ্গে আপস করবেন না। এ উদ্দেশ্য সাধনের
পক্ষে তরবারি হাতে নিয়ে প্রস্তুত হতে হবে। আপনাদের পূর্ব সীমান্তবর্তী প্রদেশের নিরাপত্তার জন্য এ জাতির সঙ্গে
একটি দৃঢ় মৈত্রী চুক্তির জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। এরা যদি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে না আসে, কিংবা
আমরা যদি এদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার অর্জন করতে না পারি তবে
শিগগিরই বাংলার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবে। কোম্পানি এ পর্যায়ে মিশনের
ব্যর্থতার জন্য রেসিডেন্ট কক্সকেই দায়ী করে এবং রেসিডেন্টকে কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেয়। তাকে জানানো হয় যে কলকাতায়
প্রত্যাবর্তনে বর্মিরা কোনো বাধা দিলে কোম্পানির সুপ্রিম কাউন্সিল সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ
করবে। এ সময় হঠাৎ
করে বর্মিদের মনোভাব পরিবর্তন হয় এবং তারা
কোম্পানির মিশনের প্রতি আন্তরিকতাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে। সম্ভবত মিশনটি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের সংবাদই বর্মিদের মনোভাব পরিবর্তনের কারণ ছিল। ক্যাপ্টেন কক্স ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন কলকাতায়
ফিরে আসেন। ক্যাপ্টেন
হিরাম কক্স কলকাতা ফিরে আসার পরেই তাকে চট্টগ্রামের দক্ষিণে আরাকানি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য সুপারিনটেনডেন্ট নিযুক্ত করা হয়। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব দিয়ে হিরাম কক্সকে চট্টগ্রামের কালেক্টর মি. ফ্রায়ারের কাছে পাঠানো হয়। হিরাম কক্সের নিযুক্তির আগে চট্টগ্রামের কালেক্টর তার নিজস্ব লোকজনদের মাধ্যমেই উদ্বাস্তুদের দেখভাল করতেন। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নতুন নিয়োগ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের পরির
পাহাড়ে পৌঁছে কালেক্টর মি. ফ্রায়ারের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন। তখন
শুষ্ক মৌসুম। সম্ভবত ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর বা ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের
জানুয়ারি। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স তার বাহিনী নিয়ে রামু পৌঁছেন। তিনি রামু পৌঁছে আরাকানি উদ্ভাস্তুদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং তাদের পুনর্বাসনে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। উদ্বাস্তুদের
পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে কক্সের স্থান নির্বাচন ছিল সুস্পষ্ট এবং সুদৃঢ়। কোম্পানি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলকে নির্দিষ্ট করেছিলেন। কক্স সরকারি মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলেই
পুনর্বাসনের স্থান নির্ধারণ করেন। দক্ষিণাঞ্চলে এরই মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে উদ্বাস্তুরা বসবাস শুরু করে দিয়েছিল। উত্তরাঞ্চলে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করার পক্ষে পূর্বে বোর্ড অব রেভিনিউর সদস্য
টমাস গ্রাহাম জোর সুপারিশ রেখেছিলেন। ক্যাপ্টেন
কক্সের দক্ষিণাঞ্চলে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের কারণ ছিল এই যে: ১.
চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে চাষাবাদ ও বসতি সম্প্রসারণ
করা প্রয়োজন, ২. উদ্বাস্তুদের বিচ্ছিন্নভাবে
নয়, সমষ্টিগতভাবে পুনর্বাসন দেয়া প্রয়োজন, যেখানে এরা একে অন্যকে সাহায্য করতে পারবে এবং নিজেদের প্রাচীন আইনের মাধ্যমে শাসিত হয়ে বনভূমি আবাদ করে উত্পাদন বাড়াতে সক্ষম হবে, ৩. উদ্বাস্তুদের ব্যক্তিগতভাবে
পুনর্বাসন সাময়িকভাবে লাভবান করবে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ উদ্বাস্তুদের জীবন হবে দরিদ্র ও ভবঘুরের মতো
এবং তারা এই নিরাপত্তাহীন জীবন
বেশিদিন পছন্দ করবে না। তাই তিনি উদ্বাস্তুদের বাঁকখালী নদী অথবা নাফ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে পুনর্বাসনের স্থান নির্বাচন করেন। এ
অঞ্চলে পুনর্বাসনে তিনি একটি প্রশাসনিক সুবিধাও দেখেন। আর তা এই
যে তাদের জঙ্গি স্বভাব মগ, বর্মি বা পার্বত্যবাসীর আক্রমণ
প্রতিহত করার কাজে লাগবে। তবে তিনি কিছু অসুবিধাও লক্ষ করেন। প্রথমত, কোম্পানির প্রতি বর্মি সরকারের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং দ্বিতীয়ত, আরাকানি বিদ্রোহী সর্দারদের আক্রমণের প্রবণতা। সমকালীন নথিপত্রে তার প্রমাণ না থাকলেও বার্মা
মিশনে কক্সের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্ভবত তাকে উদ্বাস্তুদের এ অঞ্চলেই পুনর্বাসিত
করে বর্মি সরকারের মাথাব্যথার কারণ সৃষ্টি করার কাজে উত্সাহী করে তুলেছে। কক্সের বার্মা মিশনটি ছিল মোটামুটি ব্যর্থ এবং মর্যাদাহানিকর। কখনো কখনো তাকে অদক্ষ অফিসার মনে হতে পারে। কিন্তু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে তার সিদ্ধান্ত ছিল বলিষ্ঠ। তিনি বার্মা সরকারের যেকোনো আক্রমণ মোকাবেলার জন্য বাঁকখালী নদীর তীরে সেনা ঘাঁটি স্থাপনের সুপারিশ করেন। তিনি রামু থেকে উখিয়াঘাট ও নাফ নদী
পর্যন্ত তীর থেকে ৩০ মাইল দূরত্ব
রেখে একটা রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। অবশ্য আগে লেফটেন্যান্ট টমাস ব্রগহাম এ রাস্তা নির্মাণের
প্রস্তাব করেছিলেন। এ রাস্তা নির্মাণের
প্রস্তাব বোর্ড অব রেভিনিউ সমর্থন
করে। রাস্তা নির্মাণের কাজে কক্স উদ্বাস্তুদের নিয়োগ করেন। রামু থেকে উখিয়াঘাট পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে উদ্বাস্তুদের ব্যবহারের জন্য বোর্ড অব রেভিনিউ ঢাকার
কালেক্টরকে ৩ হাজার ৫০০টি
কোদাল প্রেরণের নির্দেশ দেন।১ ‘উদ্বাস্তুদের
ব্যক্তিগত জীবনে তাদের আইন ও প্রথাকে প্রাধান্য
দেয়া হয়। তবে এখানকার আইনকে, প্রথাকে উপেক্ষা করা হয়নি—সমন্বয় সাধনের একটি শর্ত লক্ষ করা যায়। ক্যাপ্টেন কক্স সঠিকভাবে কোম্পানির স্বার্থ স্বীকার করে পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনা করেন। তিনি রামু থেকে উখিয়াঘাট পর্যন্ত প্রস্তাবিত রাস্তার দুই পাশে উদ্বাস্তুদের বসতি দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি আদর্শ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বনভূমি পরিষ্কার ও আবাদের জন্য
উদ্বাস্তুদের ২০০ কুঠার, ১০০ কাটারি, ১২ খানা বড়
কাঁচি, ২০টি করাত, ৫০টি সুচালো কুঠার, ১০০টি কোদাল এবং চারটি শানপাথর দেয়া হয়।’২ তিনি
আরাকানি উদ্বাস্তুদের পেশাভিত্তিকভাবেই পুনর্বাসন করেন। এ সময় বর্তমান
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ কূল ঘেঁষে অনেক উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসন করেন। এ সময় তিনি
বাঁকখালী নদীর তীরে একটি বাজারের পত্তন করেন এবং বাজারের সন্নিকটে পাহাড়ের ওপর বৌদ্ধমন্দির স্থাপন করেন। হিরাম কক্স কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সেই মন্দিরটির নাম ‘মহাসিংদ্রোগি’। বর্তমানে ‘মহাসিংদ্রোগি’
বৌদ্ধমন্দিরকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার গড়ে উঠেছে। ক্যাপ্টেন
কক্স রামুর অফিসে বসেই তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তিনি অফিসের সঙ্গেই তার থাকার ব্যবস্থা করেন। আরাকানি উদ্বাস্তুদের সম্পূর্ণ পুনর্বাসনের আগেই বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। এতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স প্রায় বিনা চিকিত্সায় ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ
করেন। রামুর বাঁকখালী নদীর তীরে কক্সকে সমাহিত করা হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। বাঁকখালী নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও ভাঙনে সেই
সমাধি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হিরাম
কক্স মারা যাওয়ার পর ঢাকার রেজিস্ট্রার
মি. কার হিরাম কক্সের স্থলাভিষিক্ত হন। আর এরই মধ্যে
হিরাম কক্স প্রতিষ্ঠিত বাজারটি কক্স সাহেবের বাজার নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ফলে মি. কারও বাজারের নাম ‘কক্স সাহেবের বাজার হিসেবে রেখে দেন।’ পরবর্তীকালে বাজারটি কক্স সাহেবের বাজার থেকে ‘কক্সবাজার’-এ রূপ লাভ
করে। রামুর
অফিসের চর আগেই
উল্লেখ করেছি, হিরাম কক্স বার্মিজ শরণার্থীদের পুনর্বাসন করার জন্য রামুতে এসে একটি বাংলোতে অবস্থান নেন। অনেকেই ওই বাংলোকে ‘হিরাম
কক্স’-এর বাংলো বলে
মনে করেন। কিন্তু এটা সঠিক নয়। হিরাম কক্স রামুতে আসার অনেক আগেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শরণার্থীদের দেখভাল করার জন্য তাদের কর্মকর্তাদের জন্য একটি অফিস তথা আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। ব্রিটিশ
জরিপকারী ফ্রান্সিস বুকানন ৭-৮ এপ্রিল,
১৭৯৮ রামুতে পৌঁছে কোম্পানির সেই অফিসেই অবস্থান নিয়েছিলেন। এতে এটা স্পষ্ট যে হিরাম কক্স
যে অফিসে বা আবাসনে অবস্থান
নিয়েছিলেন তা তিনি নির্মাণ
করেননি। কোম্পানির সেই অফিসের কারণে রামু উপজেলা সদরের ওই স্থানের নাম
হয়েছে ‘অফিসের চর’। তথ্যসূত্র ১.
রামুর ইতিহাস, আবুল কাসেম, প্রথম প্রকাশ-অক্টোবর ১৯৯৪, প্রকাশক: কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৪৯-৫০। ২.
প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫১। মুহম্মদ
নূরুল ইসলাম: সাংবাদিক, লোকগবেষক; সভাপতি, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমি