পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বণিক বার্তা প্রতিনিধি,ময়মনসিংহ

শেরপুরে মহারশী নদীর খৈলকুড়ায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে পানি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার সবক’টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে পানির চাপে মহারশী নদীর কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর দুই কূল উপচে দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। উপজেলা দুটির গ্রামীণ অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পাশাপাশি ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত নালিতাবাড়ীতে ২২৫ মিলিমিটার, নাকুগাঁও পয়েন্টে ২৬০ মিলিমিটার ও শেরপুর সদরে ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদের পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সোমেশ্বরী, মৃগী ও ব্রহ্মপুত্রসহ নদ-নদীর পানি। নদীর পানি উপচে ঝিনাইগাতী বাজার, খৈলকুড়া, দীঘিরপাড়, বনকালী, চতল, আহম্মদনগর, বৈরাগীরপাড়া, সুরিহারা, কালীনগর; ধানশাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ দাড়িয়ারপাড় ও কান্দুলী; গৌরীপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এবং হাতিবান্ধা ইউনিয়নের দুটি গ্রামসহ অন্তত ৪০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এসব এলাকার আমন ধান ও সবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছের খামার। ঝিনাইগাতী বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

ঝিনাইগাতীর সাহেদ আলী জানান, ২০০১ সালেও এমন পানি হয়নি। তাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রান্না করতে পারছেন না। রাস্তায় পানি ওঠায় চলাচলও করতে পারছেন না।

কৃষক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘সব ফসল পানির নিচে। কী হবে জানি না। এবার মনে হয় আর কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারব না। অনেক বিপদের মধ্যে পড়ে গেলাম।’

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মহারশী নদীর খৈলকুড়ায় তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে অনেক ক্ষতি হবে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘নালিতাবাড়ী উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ২০০ হেক্টর আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সারা দিন বৃষ্টি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।’

এ ব্যাপারে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ‘শেরপুরের তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা হবে।’

অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় নেতাই নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

হালুয়াঘাট উপজেলার তরিকুল্লাহ আশরাফী জানান, সেখানে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাছের খামারসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন