মধ্যপ্রাচ্য সংকট

হামলা-পাল্টাহামলার হুঁশিয়ারি ইরান ও ইসরায়েলের

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহরগুলোয় গতকাল সকালে আবারো বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার রাতে ইরানের ওই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী পাল্টাহামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এ নিয়ে দেশটির নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু। সম্ভাব্য হামলায় সমর্থনের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে হুঁশিয়ারি দিয়ে তেহরান বলেছে, তাদের ভূখণ্ডে কোনো হামলা হলে ইসরায়েলের সব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর পাল্টাহামলা চালানো হবে।

এদিকে ইরানের হামলার পর লেবানন সীমান্তে স্থল আক্রমণ বাড়িয়েছে ইসরায়েল। সামরিক অভিযান জোরদার হয়েছে গাজায়ও। 

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। দেশটি জানায়, হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নসরাল্লাহ হত্যার প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালিয়েছে তারা। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, এতে প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক অস্ত্রসহ মোট ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) বলেছে, তারা তেল আবিবের তিনটি সামরিক ঘাঁটি ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর ওপর এ হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের নিক্ষেপ করা কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের বিমান বাহিনীর একাধিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এতে কোনো হতাহত এবং তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কোন কোন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, সে তথ্য অবশ্য তারা জানায়নি। ইসরায়েল বলেছে, এ হামলা চালিয়ে ইরান ‘বড় ধরনের ভুল’ করেছে। এজন্য ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার বিকালে তেল আবিবে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু। এতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তা অংশ নেন। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানে বড় আকারের হামলার প্রস্তুতি নিতে এ বৈঠক হয়ে থাকতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের পাল্টাহামলার পরিকল্পনায় খোলাখুলিভাবে সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল। পাশাপাশি গাজায়ও যুদ্ধবিরতির সমর্থন জানানো হয়েছে। তবে ইরানের হামলার পর নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

গতকাল জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন বলছে, হামাস ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ সম্প্রসারণের কর্মকাণ্ড এবং ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিচ্ছে। প্রতিক্রিয়ার ধরন কেমন হতে পারে—এ প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘সেটা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।’ 

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে ইরানের ওপর গুরুতর প্রতিশোধ নেবে দেশটি। এর অংশ হিসেবে ইরানের তেল উত্তোলন ও পরিশোধন অবকাঠামোসহ অন্যান্য কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালানো হতে পারে।

তবে পাল্টাহামলা হলে আবারো হামলার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানান, তেহরানের এ (হামলার) উদ্যোগ সমাপ্ত হয়েছে, যদি না ইসরায়েলি শাসকরা আরো পাল্টা জবাব দেয়ার কারণ সৃষ্টি করে।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সাধারণ ইরানিরা। তারা বলেছে, ১৯৮০-এর দশকে ইরাকের সঙ্গে আট বছরের যুদ্ধে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন সংঘাতও কেবল আরো দুর্ভোগ বয়ে আনবে। 

এদিকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। লেবানন সীমান্তে সৈন্য বাড়িয়েছে ইসরায়েল। স্থলবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে পদাতিক ও ভারী অস্ত্র বহনকারী ইউনিট। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল সকালে ইসরায়েল আবারো বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপশহরগুলোয় বোমাবর্ষণ করেছে। এ এলাকাগুলো হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েল জানায়, এ আক্রমণে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে এক ডজনের বেশি বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

লেবাননে এক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, ২২ বছর বয়সী ওই কর্মকর্তার নাম ক্যাপ্টেন ইতান ইউৎজাক অস্টার। তিনি গেরিলা যুদ্ধের জন্য বিশেষায়িত একটি এলিট কমান্ডো দলের অধিনায়ক ছিলেন। এছাড়া আরো অন্তত আট সৈন্য নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। 

এদিকে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা সীমান্ত শহর মারউন এল-রাসে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে এবং অন্যান্য সীমান্ত শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। বুধবার সকালে উত্তর ইসরায়েলের সামরিক পোস্টগুলো লক্ষ্য করে প্রায় ১০০টি রকেট হামলা চালানোর কথাও জানিয়েছে গোষ্ঠীটি। 

লেবানিজ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননকে পৃথককারী ব্লু লাইন অতিক্রম করেছে। তারা দক্ষিণ লেবাননের প্রায় ৪০০ মিটার ভেতরে প্রবেশ করে। পরে অল্প সময়ের মধ্যে সেখান থেকে সরে যায়। 

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় এক বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০ মানুষ নিহত এবং নয় হাজারের বেশি আহত হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রাণহানি গত দুই সপ্তাহে ঘটেছে। যুদ্ধের ফলে ১০ লাখের বেশি লেবানিজ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননে চলমান বিমান ও স্থল অভিযানের পাশাপাশি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজাতেও হামলা বাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। 

এদিকে ইরানের রকেট হামলার বিষয়ে ‘অস্পষ্ট নিন্দা’ জানানোয় জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসকে “‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে দেশটিতে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে গুতেরেসকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন