দ্বিতীয় দিনও শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালিত হচ্ছে খাগড়াছড়িতে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

ছবি— বণিক বার্তা।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকে খাগড়াছড়িতে চলছে ৭২ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ। শনিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত পুরো জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে।

অবরোধে সমর্থন দিয়েছে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

সিএইচটি ব্লকেড নামে টানা তিনদিনের এ কর্মসূচির কারণে দ্বিতীয় দিনেও বিচ্ছিন্ন ছিল খাগড়াছড়ি থেকে দুরপাল্লার এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ। বন্ধ ছিল সব ধরনের যান চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে জেলা শহরের পৌর এলাকায় সীমিত আকারে চলাচল করেছে ছোট পরিবহনগুলো।

অবরোধের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হলেও গত দুই দিনে জেলার কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে এখনো কোথাও কোথাও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলা সদরসহ অধিকাংশ হাট-বাজার ছিল বন্ধ। উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে আসেনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চাষী ও বিক্রেতারা। 

অফিস-আদালতও একেবারেই মানুষ শূন্য। স্কুল-কলেজেও কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনাগোনা নেই। 

এদিকে, সহিংসতা এড়াতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন। পুরো জেলায় জোরদার রয়েছে সেনা, পুলিশ ও বিজিবির টহল। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, গত দুইদিনে জেলার কোথাও কোনো সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। কোনো গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

চলমান অবরোধের কারণে সাজেক উপত্যকায় ভ্রমণে গিয়ে আটকা পড়েছেন ১ হাজারের বেশি পর্যটক। আটকে আছে আরো ২ শতাধিক পরিবহন চালক ও হেলপার।

সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন বলেন, জীপ (চাঁদের গাড়ি), পিক-আপ, প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেলসহ ২২০টির বেশি পর্যটকবাহী পরিবহন এখানে আটকা পড়েছে। হঠাৎ অবরোধের কারণে পর্যটকরা আর খাগড়াছড়ি ফিরে যেতে পারেননি।

সাজেকে আটকা পড়া পর্যটক রায়হান রাব্বী এবং সায়মা রহমান জানান, গত দুইদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তারা খাবার ও পানির সংকটে পড়েছেন। টাকা দিয়েও মিলছে না খাবার এবং পানীয়।

স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দে জানান, গত দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে সাজেক। তার ওপর ডিজেল এবং পেট্রোলও ফুরিয়ে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা সচল না হলে অন্ধকারে বিপাকে পড়বে পর্যটক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে খাগড়াছড়ি শহরে মামুন নামের এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত হয়। আগুন দেয়া হয় ১০২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এ সব সংঘর্ষে জেলার বিভিন্ন স্থানে মোট তিনজনের মৃত্যু হয়।

সহিংসতার প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার সিএইচটি ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে জুম্ম ছাত্র-জনতা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন