ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তারেক রহমান

দলমত ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বিএনপি

দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের নীতিই বিএনপির রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। প্রত্যেক নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে, এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, দলমত ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গা পূজা উপলক্ষে গতকাল বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুভেচ্ছা জানানোর অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘আগামী মাসেই (অক্টোবরে) আপনাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। এ উৎসব উপলক্ষে আমি আপনাদের আগাম শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা প্রত্যেকে উদযাপন করুন নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে, নিরাপদে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী, প্রত্যেক নাগরিক যার যার ধর্মীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক অধিকারগুলো বিনা বাধায় উপভোগ করবে, এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান—মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিল না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী, প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় আমরা বাংলাদেশী।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলার কোনো বিচার হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আপনারা দেখেছেন, সারা দেশে আইনের শাসন ছিল না বলেই কিন্তু প্রধান বিচারপতি হয়েও এসকে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়নাঘর একাকার হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু, দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আমি মনে করি, নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় প্রত্যেক নাগরিকের ভোটের অধিকার একটি কার্যকরী শক্তিশালী অস্ত্র। যতদিন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান অর্থাৎ দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেক নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।’

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। পাশাপাশি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান দাঁড়িয়ে। এখন আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলছি, সেটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এখানে যারা চক্রান্ত করছে, আবার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ইসকনের চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডুও উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন