মতবিনিময় সভায় শিল্প উপদেষ্টা

সব পোশাক কারখানা আজ খোলা থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গতকাল এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ছবি: পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘রোববার (আজ) দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সব কারখানা খোলা থাকবে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে।’

আশুলিয়া ও গাজীপুরের পোশাক কারখানাগুলোয় সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে গতকাল এক মতবিনিময় সভায় শিল্প উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ সভা আয়োজন করে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আজ দেশের সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে মালিক পক্ষ চাইলে আইন অনুযায়ী সেই কারখানা বন্ধ রাখতে পারবে।

সভার এক পর্যায়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘এভাবে মার খেয়ে আমরা কারখানায় যাব না। আমাদের যদি নিরাপত্তা দেন, তাহলে আমরা কারখানা চালাব, না হলে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ 

এ কে আজাদ বলেন, ‘আমার অধীনে ৭৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। গত মাসের বেতন দিয়েছি, আমার খুব কষ্ট হয়েছে। তৎকালীন সরকারের সময় ছুটি, কারফিউ—আমরা কাজ করতে পারিনি। সরকার পরিবর্তন হওয়ার সময় আবার সরকারি ছুটি, কারফিউ—কাজ করতে পারিনি। তারপর শুরু হলো শ্রমিক আন্দোলন। প্রথম নাসা গার্মেন্ট থেকে শুরু হলো। নাসা গার্মেন্ট থেকে বের হয়ে পাশের গার্মেন্টে। পাশের গার্মেন্ট থেকে এসে আমার গার্মেন্টে দরজা ভাঙতে শুরু করল। আমাদের দুটো গেট। প্রথম গেট ভেঙে ফেলল। কী চাই? চাকরি চাই। কেন চাই? বেকার সংঘ! এমন একটা সমিতি বের হলো! তাদের চাকরি দিতে হবে। আমরা সব দাবি মেনে নিলাম। আমাদের দাবি ছিল, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেন। আজও নিরবচ্ছিন্ন কী জিনিস সেটা বুঝতে পারিনি। ডিজেলে আজও ৪-৫ ঘণ্টা কারখানা চালাতে হয়। ডিজেলে চালাতে হলে আমার খরচই উঠবে না। আমরা জানতে চাই, কারখানা খোলা রাখব নাকি বন্ধ রাখব।’

পরে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এ কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার যে সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটা জায়গায় এসেছি, যখন একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে, শিল্প অঞ্চলগুলো কীভাবে চালু রাখা যায়। আমরা আলোচনা করছি। কারখানা রক্ষা করতে গিয়ে আমরা দেখছি বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা কারখানা রক্ষার জন্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করছেন। মালিকরা সহযোগিতা করছেন। কিছু জায়গায় সেটা হচ্ছে না।’

সভায় শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য কোন প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রমসংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই, এমনও নয়।’

শ্রম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার। তবে এসব প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা করবে, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যম ও ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে বলা হচ্ছে “‍এখনই ভালো সময় ইনভেস্ট করার”। এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা কী করব। শিল্প কি আমাদের এখানে থাকবে, নাকি অন্য শক্তি নিয়ে নেবে?’

তিনি বলেন, ‘অনেক মালিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বেতন দেন না। সরকারের প্রণোদনার অপেক্ষায় থাকেন। এ আচরণ বদলাতে হবে। যেকোনো আন্দোলনে ষড়যন্ত্র সব সময়ই খোঁজা হয়। কিন্তু সময়মতো বেতন না দেয়াও বড় সমস্যা।’ 

শ্রমিকদের সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সময় দিতেই হবে। আমরাও আন্দোলন করেছি, আপনাদের ন্যায্য দাবি যত দ্রুত সম্ভব সবার সঙ্গে আলোচনা করেই পূরণ করব।’

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকালও আশুলিয়া ও গাজীপুরের অর্ধশতাধিক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। সাভার প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় গতকাল ৪৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। 

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, বন্ধ কারখানাগুলোর সিংহভাগই তৈরি পোশাকের। তবে ওষুধ ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কিছু কারখানাও আছে। শ্রম আইন অনুযায়ী ৩৬টি কারখানা বন্ধ ছিল। ১৩টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে মালিক কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে বেশির ভাগ পোশাক কারখানায় আন্দোলন থেকে সরে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। তবে আটটি কারখানায় গতকাল নানা দাবিতে আন্দোলন করেন শ্রমিকরা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারওয়ার আলম বলেন, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহের শুরুর দিন বেশ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে শিল্পাঞ্চল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। বেশকিছু কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে।’

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, জিরানী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন ও চট্টগ্রাম এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৪৪টি। এর মধ্যে গতকাল খোলা ছিল ২ হাজার ১০২টি কারখানা। খোলার পর কাজ বন্ধ হয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা চারটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন