বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নির্মাতা কাজী হায়াত। বাণিজ্যিক ঘরানার চলচ্চিত্রে স্বকীয়তা তৈরি করে দারুণভাবে সফল হয়েছেন তিনি। অনেক শিল্পীকে তিনি আবিষ্কার করেছেন। তার সুদীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারে পেয়েছেন বিভিন্ন শাখায় নয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনটি বাচসাস পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক একাধিক সম্মাননা। অনেক সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা কাজ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহিদুর রহমান
কেমন আছেন ?
ভালো আছি। শরীর এ বয়সে কম-বেশি সবারই খারাপ থাকে। ইউটিউবাররা শরীর খারাপ বানিয়ে দেন আমার। আমার মৃত্যু প্রচার করে তাদের ভিউ বাড়ান, এটা খুবই খারাপ। আমাকে অনেকে টেলিফোন করে বলেন, ‘এখন কেমন আছেন।’ আমি অসুস্থ ছিলাম কবে? অসুস্থ ছিলাম বহু আগে। অনেক আগে যখন অসুস্থ ছিলাম, তখনকার দৃশ্য দেখিয়ে ইউটিউবাররা প্রচার করেন মৃত্যুশয্যায় কাজী হায়াত, ফলে আপনিও জিজ্ঞেস করছেন, ‘কেমন আছেন’। যেহেতু কথা বলছি, ভালো আছি।
আপনার কাজের কোনো খবর আছে কিনা?
আমি অবসর নিয়েছি। দু-একটা সিনেমায় অভিনয় করি। ব্যাস এতটুকুই।
৫ আগস্টের আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশে আপনার কাছে কী পার্থক্য মনে হয়?
অনেক পার্থক্য হতে চলেছে। যে আশ্বাস শুনছি, তা বাস্তবায়ন হলে মানুষ বেঁচে যাবে এবং ভালো থাকবে।
বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে কেমন বোধ করছেন?
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করে সুন্দরভাবে আমাদের থেকে যা হারিয়ে গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়েছে, সেগুলো পুনর্নির্মাণ ও পুনর্গঠন হলে দেশের মানুষ ভালো থাকবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ লেখা হয়, কিন্তু দেশে এতদিন গণপ্রজাতন্ত্র ছিল না। এতদিন দেশটা দেশের জনগণের ছিল না। জনগণ দাবি করতে পারত না যে এটা আমার দেশ। এখন অন্তত দাবি করতে পারছে। যদি বর্তমান সরকার দেশের মালিকানা জনগণের হাতে সুন্দরভাবে তুলে দিতে পারে, তাহলেই দেশটা ভালো থাকবে। আমরা সবাই ভালো থাকব।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সরকার পতন, তারপর বন্যা। গত কয়েক মাসে নতুন সিনেমার খবর নেই। বাংলা সিনেমা কি আবারো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি?
অস্থিরতা থাকলে মানুষ কখনো সিনেমা দেখে না। ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হবে। অনেকগুলো সিনেমা সেন্সরে পড়ে আছে। সেগুলো সেন্সর হলে সিনেমা রিলিজ হবে।
সেন্সর বাতিল নাকি সংস্কার, আপনি কোনটা চান?
সেন্সর সংস্কার করা প্রয়োজন। আমি বাতিলের পক্ষে না।
শিল্পীদের রাজনীতিসংশ্লিষ্টতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
পৃথিবীর সব দেশেই শিল্পীরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার মত হলো শিল্পীরা সমাজের বিবেক, তারা সত্য কথা বলবেন। আমাদের দেশের নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পী সবই সমাজের বিবেক। যেখানে ভুল হবে, সেখানেই তারা চিৎকার করে উঠবেন। জানিয়ে দেবেন সরকারকে যে তোমাদের ভুল হচ্ছে। এটাই ছিল আমার প্রত্যাশা।
যারা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের বিতর্কিত করেছেন, তাদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে?
তাদের উদ্দেশে আমার কিছু বলার নেই। তারা যেটা ভালো বুঝেছেন, সেটাই করেছেন।
শিল্পীদের বিভাজন নিয়ে আপনি কী বলবেন?
প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব মতামত থাকে। সে মতামতের সঙ্গে যদি অন্যের মত না মেলে, তাহলে সেখানে বিরোধের সৃষ্টি হয়। শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা সামান্য স্বার্থের জন্য স্বকীয়তা বিকিয়ে দেন।
আশা করি ভবিষ্যতে এমনটি হবে না। আমাদের শিল্পীরা দলে বিভাজিত হবেন না, দলবাজি করবেন না। এটুকু অন্তত আশা আমার।