মণিপুরে কারফিউ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : বণিক বার্তা

সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রতিবাদে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলসহ কয়েকটি জেলায় হাজারো বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। স্কুল ও কলেজ সোমবার থেকে বন্ধ করে রাজ্য সরকার। তিনটি জেলায় গতকাল কারফিউ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। পাঁচদিনের জন্য রাজ্যজুড়ে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক সেনা সদস্য এবং এক নারীর মৃত্যুর পর গত সোমবার নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, গতকাল বেলা ১১টা থেকে ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিম এবং থৌবাল জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের বাসা থেকে দূরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবাকে কারফিউর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টা থেকে পাঁচদিনের জন্য (১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টা পর্যন্ত) গোটা রাজ্যে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গতকালও মণিপুরের রাজ ভবনের সামনে ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সাম্প্রতিক হামলায় যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাবেক হাবিলদারের নাম লিমখোলাল মেট। তিনি কাঙ্গপোকপি জেলার মটবুঙের বাসিন্দা। ইম্ফল পশ্চিম জেলার সেকমাই এলাকায় তার মরদেহ পাওয়া গেছে। সেকমাইয়ে তিনি রোববার রাতে তার গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছে নিরাপত্তা বাহিনী। পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যায় কাঙ্গপোকপি জেলার আদিবাসী গ্রাম থাঙবু আংশিক জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা আগুন দিয়েছে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হতে পারেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বোমা বিস্ফোরণে স্প্লিন্টারের আঘাতে নেঙ্গজাখোল হাওকিপ (৫০) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে মণিপুর সরকার সোমবার ও মঙ্গলবার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এর পরও শিক্ষার্থীরা রাজ ভবনের সামনে জমায়েত হয়েছে। তারা স্লোগান দিচ্ছে ‘লং লিভ মণিপুর’, ‘অযোগ্য এমপিরা পদত্যাগ করো’ ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা পড়াশোনার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চান। তারা ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরের পদত্যাগ দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিফায়েড কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন তারা। এছাড়া রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় আর্মড পুলিশ বাহিনী এবং আসাম রাইফেলস বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা গভর্নর এল আচার্য ও মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। দাবিগুলো দ্রুত কার্যকরের জন্য তার একটি স্মারকলিপি দেন। শিক্ষার্থীরা ৫০ জনেরও বেশি রাজ্যসভার অযোগ্য সদস্যের পদত্যাগ চেয়েছেন। যদিও ১০ জন কুকি সম্প্রদায়ের এমএলএর বিষয়ে তারা কিছু বলেননি।

একই ধরনের প্রতিবাদ চলছে থৌবাল জেলায়। এছাড়া কাকচিঙ্গ জেলায় স্থানীয় জনতা বিশাল মিছিল বের করে সাম্প্রতিক নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

সাম্প্রতিক সহিংসতায় ড্রোন ও রকেট লঞ্চারের মতো উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্রমে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন