কোটা সংস্কারের দাবি

চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক I চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গতকাল সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী; একজন পথচারী। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম, ওমরগণি এমইএস কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও পথচারী মো. ফারুক। তিনি নগরীর একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়, ফয়সাল আহমেদের বাড়ি বরিশালে ও ফারুকের বাড়ি নোয়াখালীতে। 

চট্টগ্রামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুর থেকে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা আড়াইটার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করতে প্রধান সড়ক দিয়ে ২ নম্বর গেটের দিকে অগ্রসর হন। এক পর্যায়ে জিইসি মোড় থেকে আসা ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীরা মুরাদপুরের দিকে চলে যান। কিন্তু মুরাদপুর অংশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলা শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা ইট-পাথর নিক্ষেপ করেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি গুলি চালান। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। 

সংঘর্ষের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন (সিএমপি) পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে চট্টগ্রামে তিনজন নিহত হয়েছে। নিহত পথচারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু ওয়াসিমের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানি না। সংঘর্ষের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও আহত হয়েছে।’

হতাহতের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ৮টা পর্যন্ত ৪০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ১০ জনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাদের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। 

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তিনজনের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত তিনজনকে একই এলাকা থেকে হাসপাতালে আনা হয়।’ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিজিবি ৮-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী জানান, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

এদিকে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল প্রায় ৪ ঘণ্টা। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুমিরা স্টেশন এলাকায় আটকে থাকে। পরে পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে। সড়ক অবরোধ করায় ঢাকা-চট্টগ্রাম উভয় মুখে যানবাহন চলাচল দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন