আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি কয়েকশ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ২০টি জেলায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়ে দেশের জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় পুলিশ, সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালক সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। একই সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত রাজধানী, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। 

এদিকে সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তারা বলছেন, এসব ঘটনায় আহত হয়ে কেউ হাসপাতালে এলে তার সঙ্গে অনেক লোকজনও আসেন। উত্তেজিত লোকজনের কারণে তখন স্বাভাবিক চিকিৎসা চালিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন সাধারণ রোগীরাও।  

হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুদিন ধরে আহত হয়ে তিন শতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে সংঘর্ষে আহতদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা তাদের নিয়ে আসা লোকজন উত্তেজিত থাকেন। এ সময় সাধারণ রোগীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। গতকাল সারা দিন সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। দিনের বিভিন্ন ভাগে এসব আন্দোলনকারী ও পথচারী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে এসেছেন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সারা দিন অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের জখম গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুরুতর আহত হওয়ায় ছয়জনকে ভর্তি করা হয়েছে। আর দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ওই দুজনের কেউই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাননি। তাদের মৃত অবস্থায়ই হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’ 

রাজধানীর পরই বড় ধরনের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম ও রংপুরে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী ও পথচারী আহত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় চট্টগ্রাম নগরীতে এ পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। আহত হয়ে হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত ১২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা সবাইকেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।’

সিরাজগঞ্জে কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন ভর্তি রয়েছেন।’

সংঘর্ষে আহত হয়ে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিন শিক্ষার্থী। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের এখানে সারা দিন নয় শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় এসেছিলেন। তার মধ্যে ছয়জনকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। তিনজন ভর্তি রয়েছেন।’

বরিশাল মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ১৯ জন আহত হয়েছেন। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯ জনের সবাই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর। 

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এক যুবকের প্রাণ গেছে। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নিহত যুবক ছাড়াও কয়েকজন আহত শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি রয়েছেন। 

এছাড়া ফরিদপুর, চাঁদপুর, বান্দরবান, বরগুনা, বগুড়া, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী, পথচারী, সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন