শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বেরোবি উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I রংপুর

বেরোবি উপাচার্যের বাসভবনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হামলা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সামনে পার্কের মোড় এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এরপর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বেরোবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিকালের দিকে ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উপাচার্যের বাসভবনে ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাইরে থাকা উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যসহ পাঁচটি গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়।

জানা যায়, রংপুর শহর থেকে গতকাল দুপুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেরোবির প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হন। বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। বেলা আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ আহত হন। 

আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে (২৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার আগেই মারা যান বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার বাবুনপুর গ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম তার পরিচয় নিশ্চিত করে জানান, সাঈদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। তবে তিনি কী কারণে মারা গেছেন, চিকিৎসকরাই তা বলতে পারবেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হৃদয় রঞ্জন রায় জানান, মেডিকেলের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। 

নিহত আবু সাঈদের বন্ধু অঞ্জন রায় জানান, ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলাকালে শরীরে একের পর এক রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। তবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়। তার আগেই মারা তিনি যান। 

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান অবশ্য বলেন, ‘আবু সাঈদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।’ এদিকে আবু সাঈদ নিহতের পর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বেরোবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবনে ভাংচুর চালানো হয়েছে। দোতলা বাড়ির নিচতলায় আগুন দেয়া হয়। এ সময় ভবনের দোতলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ২০ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাইরে থাকা উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের গাড়িসহ অন্তত পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির কক্ষেও আগুন দেয়া হয়েছে। হলের সামনে থাকা একটি গাড়ি ও পাঁচটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয়া হয়েছে। শহীদ মুক্তার এলাহী হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের পাঁচটি কক্ষেও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন