সশস্ত্র দলগুলোর সহিংসতায় অচলাবস্থায় হাইতি

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি : রয়টার্স/ রিকার্ডো আর্ডুয়েঙ্গো ও পেদ্রো ভালটিরার

গত কয়েক মাস ধরেই সশস্ত্র দলগুলোর সহিংসতায় প্রায় অচল হয়ে আছে পশ্চিম গোলার্ধের দেশ হাইতি। খুন, অপহরণ , লুটতরাজের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে হাইতিতে লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়েছেন। প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অনেককে অপহরণ করা হয়েছে।  খাবারের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এমন সহিংস অবস্থায় অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন হাইতির প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।

তেমনই একজন হাইতির মাজোরি ইডোই। তিন সন্তানের মা, ৩০ বছর বয়সী ইডোই হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের একটি স্ট্যান্ড থেকে ফল কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন। সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো প্রায় সব বাণিজ্যিক রুট বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে তার কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে এসেছে। বাস্তুচ্যুতদের জন্য করা অস্থায়ী শিবিরগুলোতে সামান্য কিছু পণ্য বিক্রি করেন তিনি। যা থেকে আয়ও হয় যৎসামান্য। এতে চরম ক্ষুধায় তিন সন্তানসহ দিন কাটছে তার।

খাদ্য সংকট নিরসনে ও নিরাপদ হাইতির জন্য একটি বৈধ সরকারের দাবি ইউডোর মতো হাজারো হাইতি নাগরিকের।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক স্বচিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে হাইতির মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। আলোকচিত্রী রিকার্ডো আর্ডুয়েঙ্গো ও পেদ্রো ভালটিরার ফটোস্টোরিতে ইউডোসহ হাইতির জনগণের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়।   

ক্ষুধা মূল্যায়নের জন্য ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) অনুসারে হাইতির প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সংঘাতের কারণে নিজেদের খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।

২০২১ সালে হাইতির শেষ প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর থেকে দেশটিতে সশস্ত্র দলগুলো তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তার করেছে। এদের বেশিরভাগই রাজধানী দখল করে নিয়েছে। দখল করে নিয়েছে রাজধানীর আশপাশের প্রায় সব কৃষিজমি। জমি দখল লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গণধর্ষণ ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিন।

এ পরিস্থিতিতে হাইতিতে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। জুন মাসে সাহায্যের জন্য  জাতিসংঘ সমর্থিত একটি বাহিনী হাইতিতে পৌঁছায়। পাশাপাশি কেনিয়ার পুলিশ রাজধানীতে টহল দিচ্ছে। তবে পূর্ণশক্তিসম্পন্ন বাহিনীগুলো কবে নাগাদ হাইতিতে পৌঁছাবে তা এখনো নিশ্চিত নন হাইতির বাসিন্দারা।

অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেয়া হাইতির আরেক নারী মরিয়ম অজ। তিন মাস আগে বাড়িঘর লুট করে তাকে গৃহহীন করেছে হাইতির এক সশস্ত্র গোষ্ঠী। তারপর থেকে তিনি তাঁবুতে ঘেরা একটি অস্থায়ী আশ্রয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন।

মরিয়ম জানান, অস্থায়ী ক্যাম্পে দুই মেয়ে ও তিনি আরো ৫ জনের সঙ্গে একটি মাত্র বেঞ্চে পালা করে ঘুমান রাতে।

হাইতিতে সহিংস পরিস্থিতিতে কাজ করতে অক্ষম পরিবারগুলো এখন বেসরকারি সংস্থাগুলোর দেয়া খাদ্য রেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি কিটের ওপর নির্ভরশীল।  

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) হাইতির ক্যাম্পগুলোতে প্রধান সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর একটি। সংস্থাটি নিজেদের চারটি কেন্দ্রীয় রান্নাঘর থেকে ক্যাম্পে খাবার সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

তবে ডব্লিউএফপির হাইতির পরিচালক জিন-মার্টিন বাউয়ার জানা, খাদ্য সরবরাহের কাজটি কঠিন। কারণ যে ক্যাম্পের জন্য খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে তার আশপাশে যদি গোলাগুলি হয় তাহলে খাবার সরবরাহ বন্ধ থাকে। ফলে দিনটিতে না খেয়ে থাকতে হয় ক্যাম্পের সবাইকে।

এসব কারণে ডব্লিউএফপি গ্যাং-নিয়ন্ত্রিত রাস্তা এবং বন্ধ বন্দরগুলোর মাধ্যমে পরিবহনের ঝুঁকি এড়াতে খাদ্য সরবরাহের চেইন সংকুচিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য স্থানীয় খাদ্যের ওপর জোর দিচ্ছে তারা। হাইতির স্থানীয় সোর্ঘাম শস্য এবং কলালু সংগ্রহ করে তার সরবরাহের চেইনগুলোকে ছোট করছে।

২০২৪ সালের ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের জাতিসংঘের মানবিক তহবিল থাকা সত্ত্বেও হাইতিতে ডব্লিউএফপির বিতরণ পরিকল্পনা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত ছিল না বলেও জানিয়েছেন বাউয়ার।

হাইতির খাদ্য সংকট দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সহিংসতায় এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে।

খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিও হাইতির সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। হাইতির আইএইচএসআই পরিসংখ্যান সংস্থা অনুসারে, এক বছর আগের তুলনায় মার্চ মাসে দ্বীপের দেশটিতে তাজা মাছের দাম ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে রান্নার তেল এবং চালের দাম। তথ্যসূত্র : রয়টার্স 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন