বন্যায় সিলেটে পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

নূর আহমদ, সিলেট

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত সিলেট নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বন্যার কারণে সিলেটে পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বেশির ভাগ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু এখনো পানিতে নিমজ্জিত। ঈদের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুললেও বন্ধ রয়েছে পাঠদান।

বিদ্যালয়সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিখন ঘাটতি কমাতে ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি কমিয়ে ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৬ জুন থেকে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদান শুরু হয়। তবে সিলেটের অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদের পর আর পাঠদান শুরু হয়নি। ৩ জুলাই থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুললেও পাঠদান হয়নি।

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে প্রথম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ২৯ মে। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয় ৮ জুনের পর। বন্যার দ্বিতীয় ধাক্কা আসে ১৬ জুন। পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা বন্যার কবলে পড়ে। ধীরে ধীরে নগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা দেখা যায়। ১৯ জুন ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ওইসব উপজেলায় বন্যা বিস্তৃত হয়। তবে ২৫ জুন থেকে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হতে শুরু করলেও গত সোমবার থেকে আবারো অবনতি হয়।

জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে জেলায় ৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে ৭৮টি। এছাড়া কয়েকটি কলেজে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯৮টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭, বিশ্বনাথে দুই , বালাগঞ্জে ৫৫, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২, গোলাপগঞ্জে ২৭, বিয়ানীবাজারে ৫৪, জকিগঞ্জে ২৩, কানাইঘাটে চার, জৈন্তাপুরে তিন, গোয়াইনঘাটে দুই, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫, দক্ষিণ সুরমায় ২২ ও ওসমানীনগরে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পাঠদান বন্ধ রয়েছে বলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘৩৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকিগুলো পানিতে নিমজ্জিত। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। ওই এলাকায় পানি কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। বিদ্যালয়গুলো যেহেতু আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, এজন্য সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে বানভাসি মানুষ।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। কুশিয়ারার অববাহিকার এসব এলাকায় বন্যার পানি কমছে না। জকিগঞ্জে ডাইক ভেঙে পানি ঢুকেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভবনাও কমেছে। দীর্ঘদিন পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। পানি কমলে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা আরো বেড়েছে। ২০৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে ৯ হাজার ৪৯৩ জন। গত শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৩২৯ জন। সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ নেই কেবল সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদানের উপযোগী হতে একটু সময় লাগবে। কারণ বিদ্যালয়গুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন