![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_389844_1.jpg?t=1720295953)
বিশ শতকের প্রভাবশালী চিত্রকরদের একজন জ্যাকব লরেন্স। ১৯১৭ সালে আটলান্টিক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেড়ে উঠেছেন অভিবাসী পরিবারে। সেই বিক্ষত শৈশবের অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে পরিণত হয় শিল্পচর্চার অনুপ্রেরণায়। কর্মমুখর জীবনের অনবদ্য উদাহরণ ‘মাইগ্রেশন সিরিজ’। ৬০টি চিত্রকর্ম নিয়ে বিস্তৃত তার এ সিরিজে উঠে এসেছে আমেরিকায় দ্য গ্রেট মাইগ্রেশনের ভেতরের গল্প।
গ্রেট মাইগ্রেশন হলো ১৯১০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আমেরিকাজুড়ে চলা প্রবণতা। এ সময়ে প্রায় ৬ কোটি আফ্রিকান-আমেরিকান দক্ষিণ ভাগ থেকে উত্তরের দিকে চলে আসে। এ অভিবাসনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোয় অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সামাজিক হতাশা ও বর্ণবৈষম্যমূলক নীতি। বর্ণবৈষম্যমূলক জিম ক্রো নীতির শিকার হয়ে বাকি সবার মতো লরেন্সের পিতা-মাতাও নিউ জার্সি, ডেট্রয়েট শিকাগোর মতো জায়গায় এসে থিতু হন। অভিবাসীরা যে শহরেই থিতু হয়েছেন, সেখানকার সংস্কৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়। লরেন্সের পিতা-মাতা অভিবাসী দলের সদস্য। তাদের সেই যাত্রা পরবর্তী সময়ে উঠে এসেছে জ্যাকব লরেন্সের কাজে।
লরেন্স তার সিরিজ শেষ করেন ১৯৪১ সালে। অঙ্কনের সময় উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দেখানো হয়েছে লাগেজ নিয়ে অভিবাসীদের অপেক্ষা, ট্রেন ধরার ব্যস্ততা, প্লাটফর্মে ঘুমানোর মতো দৃশ্যগুলো। অভিবাসনের সময় অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান প্রতিরোধ করতে চেয়েছিল। ঘটেছিল নানা বিপত্তির ঘটনা। অনেক অভিবাসীকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে দিনগুলো। সেটাও বিম্বিত হয়েছে লরেন্সের তুলিতে। ১৯৯৩ সালে যখন ‘জ্যাকব লরেন্স অ্যান্ড দ্য মেকিং অব দ্য মাইগ্রেশন সিরিজ’ নামের ডকুমেন্টারি নির্মিত হয় তখন সেখানে লরেন্স দাবি করেন, ‘আমি এমন কিছু আঁকতে চেয়েছি, যা খুবই বিরল। কেউ এখানে তাকালে মুহূর্তেই সেটা দেখতে পাবে।’
লরেন্স পুরো সিরিজটিকেই একটামাত্র চিত্রকর্ম বলে মনে করতেন সবসময়। এজন্য তিনি এক সময়েই কাজ এগিয়ে নিয়েছেন, যাতে তাদের মধ্যকার ক্রমিক সম্পর্ক স্পষ্টভাবে হাজির করে তোলা যায়। জ্যাকব বলেন, ‘আমি কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান হওয়াকে মার্কিন সংস্কৃতির জন্য একটা আলাদা অভিজ্ঞতা হিসেবে মনে করি না। বরং এটা আমেরিকান ঐতিহ্যেরই একটা অংশ এবং এটা একটা সার্বিক অভিজ্ঞতা।’
১৯২০ থেকে ১৯৪০-এর দশকজুড়ে মেক্সিকোতে যে ম্যুরালিজম আন্দোলন হয়, তার থেকে প্রভাবিত ছিলেন জ্যাকব লরেন্স। রঙের পরতে পরতে জ্যাকব তার নিজস্ব কৌশল মুনশিয়ানার সঙ্গে আরোপ করেছেন। ২০০৮ সালে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টে উন্মোচন করা হয় তার পুরো সিরিজ। যেন কেবল আফ্রিকান মাইগ্রেশন না, জগতের সব অভিবাসীর কথাই তুলে ধরা হয়েছে।