দেশীয় চা খাত

বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ঋণাত্মক উৎপাদন

সুজিত সাহা I চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : সংগৃহীত

কয়েক বছর ধরেই চায়ের উৎপাদন ছিল ঊর্ধ্বমুখী। করোনাকালীন ছাড়া প্রতি বছরই আগের বছরের চেয়ে বাড়তি চা উৎপাদন হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু এবার চিত্রটা ভিন্ন। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাস আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম চা উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টিহীন উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এ বছর উৎপাদন কমছে বলে মনে করছেন চা খাতসংশ্লিষ্টরা। 

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি। মে মাস পর্যন্ত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১ কোটি ১৪ লাখ ৬৮ হাজার কেজি। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি মাসেই আগের বছরের চেয়ে কম চা উৎপাদন করেছেন বাগান মালিকরা। যার কারণে চলতি বছরের বাড়তি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছে চা বোর্ড।

চা বোর্ডের নথিপত্র অনুযায়ী দেখা গেছে, জানুয়ারিতে দেশের ১৬৯ চা বাগান ও উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্রায়তন চা চাষে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার কেজি চা। যদিও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি। অন্যদিকে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে ৪২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হলেও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদন হয়েছিল ৪৬ হাজার কেজি। 

এছাড়া মার্চে ২০ লাখ ৪৬ হাজার কেজির পরিবর্তে সর্বশেষ মার্চে হয়েছে ১৫ লাখ ৯৩ হাজার কেজি, এপ্রিলে ৫১ লাখ ৭ হাজার কেজির বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৪৮ লাখ ৮২ হাজার কেজি, মে মাসে ৮২ লাখ ৭২ হাজার কেজির জায়গায় ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। মূলত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহ থাকায় দেশের চা খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চা উৎপাদনের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত বৃষ্টিপাত প্রধান উপকরণ। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত দেয়া হলেও প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আবহাওয়া না হলে ভালোমানের চা উৎপাদন সম্ভব নয়। এ বছর তীব্র তাপপ্রবাহ থাকায় বাগানগুলোয় চা উৎপাদন অনেক কম হয়েছে।’

তবে বছরের প্রথম পাঁচ-ছয় মাস উৎপাদন কম হলেও আগামী কয়েক মাস নিয়মিত বৃষ্টিপাত হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি। 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে চা উৎপাদনের মূল মৌসুম শুরু হয় জুন থেকে। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই এক কোটি কেজিরও বেশি চা উৎপাদন করে দেশের বাগানগুলো। মূলত ডিসেম্বর থেকেই চায়ের উৎপাদন কমতে কমতে ফেব্রুয়ারিতে বাগান পরিচর্যার কারণে ও চা গাছ কর্তনের কারণে উৎপাদন হয় সর্বনিম্ন। আবার মার্চ থেকে চায়ের নতুন কুঁড়ি হওয়ার পর উৎপাদনের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। 

২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২২ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। চায়ের ধারাবাহিক উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও চাহিদায় ভাটা পড়ায় দেশে চায়ের দাম ক্রমেই কমছে বলে দাবি করেছেন বাগান মালিকরা। 

বাগানসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মে মাস পর্যন্ত উৎপাদন কম হলেও জুন থেকে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনিয়মিতভাবে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হওয়ায় উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ছে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময় থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় আগামী কয়েক মাস চায়ের ভালো উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। 

চায়ের উৎপাদন কম হওয়ায় দেশের নিলাম বাজারেও চায়ের সরবরাহ কমেছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ের নিলামে চা সরবরাহ কমিয়েছে বাগানগুলো। সর্বশেষ ২৪ জুন অনুষ্ঠিত অষ্টম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক চা নিলামে বাগানগুলো ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৬ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করেছে। যদিও ২০২৩ সালের অষ্টম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক নিলামে চা উঠেছিল ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১৫ কেজি। চট্টগ্রামের নবম নিলামেও আগের বছরের একই নিলাম থেকে প্রায় দেড় লাখ কেজির কম অর্থাৎ ২২ লাখ ৩৫ হাজার কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করেছে বাগানগুলো। মূলত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নিলামেও চায়ের সরবরাহ কমাতে বাধ্য হয়েছে বাগানগুলো। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন