প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা ব্যাংকের পারফরম্যান্সভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করে নিউইয়র্কভিত্তিক বৈশ্বিক আর্থিক খাতবিষয়ক তথ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্স। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সেরা ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ মূল্যায়ন ‘ওয়ার্ল্ডস বেস্ট ব্যাংক ২০২৪-এশিয়া প্যাসিফিক’ প্রকাশ হয়েছে গত ৮ মে। এতে উপমহাদেশ, চীন, উত্তর এশিয়া, অস্ট্রেলেশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য এশিয়া ও ককেশাস অঞ্চলের দেশগুলোর সেরা ব্যাংকের গত বছরের পারফরম্যান্স নিয়ে সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন করা হয়।
উপমহাদেশ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ (এসসিবি), ভারতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই), পাকিস্তানে হাবিব ব্যাংক, নেপালে গ্লোবাল আইএমই ব্যাংক (জিআইবি) ও শ্রীলংকায় কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনকে সংশ্লিষ্ট দেশের সেরা ব্যাংক হিসেবে দেখছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলা ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ও অর্থায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
এশিয়া-প্যাসিফিকের সেরা ব্যাংক (দেশের ইংরেজি নামের আদ্যক্ষরের
ভিত্তিতে) |
|
আফগানিস্তান |
এআইবি |
অস্ট্রেলিয়া |
সিবিএ |
আজারবাইজান |
পাশা ব্যাংক |
বাংলাদেশ |
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ |
ব্রুনাই দারুসসালাম |
বাইদুরি ব্যাংক |
কম্বোডিয়া |
এবিএ ব্যাংক |
চীন |
চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক |
হংকং |
এইচএসবিসি |
ভারত |
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া |
ইন্দোনেশিয়া |
ব্যাংক মানদিরি |
জাপান |
এমইউএফজি ব্যাংক |
কাজাখস্তান |
ফোর্তে ব্যাংক |
কিরগিজস্তান |
হালিক ব্যাংক কিরগিজস্তান |
ম্যাকাও |
আইসিবিসি |
মালয়েশিয়া |
মেব্যাংক |
মঙ্গোলিয়া |
খান ব্যাংক |
মিয়ানমার |
ইউএবি ব্যাংক |
নেপাল |
গ্লোবাল আইএমই ব্যাংক |
নিউজিল্যান্ড |
এএনজেড নিউজিল্যান্ড |
পাকিস্তান |
হাবিব ব্যাংক |
ফিলিপাইন |
মেট্রোব্যাংক |
সিঙ্গাপুর |
ইউওবি |
দক্ষিণ কোরিয়া |
হানা ব্যাংক |
শ্রীলংকা |
কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন |
তাইওয়ান |
ই সান |
থাইল্যান্ড |
ব্যাংকক ব্যাংক |
উজবেকিস্তান |
তেঙ্গে ব্যাংক |
ভিয়েতনাম |
টেককমব্যাংক |
বাংলাদেশের এসসিবি সম্পর্কে গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে বলা হয়, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন ও নগর উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকটির বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো এন্ড-টু-এন্ড ডিজিটাল ক্রসবর্ডার লেটার অব ক্রেডিট সুবিধা উদ্ভাবন করে ব্যাংকটি। আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ এ সুবিধাকে প্রথমবারের মতো কাজে লাগায়। এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশের আমদানি নীতিতে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ। এছাড়া দেশের ইস্পাত শিল্প খাতে সৌরশক্তি উৎপাদন, বায়ুদূষণকারী পদার্থ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ও ওয়াটার ট্রিটমেন্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বেসরকারি খাতে ‘রিকোর্স ফাইন্যান্সিংয়েরও’ সূচনা ঘটিয়েছে ব্যাংকটি।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শাখা খোলার মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ২০০০ সালের আগস্টে বাংলাদেশে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের কার্যক্রমকে অধিগ্রহণ করে নেয় এসসিবি। ওই অধিগ্রহণের সুবাদে বর্তমানে ১১৯ বছরেরও বেশি সময় এ দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার দাবিদার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গ্রিন্ডলেজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯০৫ সালে। এছাড়া ২০০৬ সালে বাংলাদেশে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমও অধিগ্রহণ করেছিল এসসিবি।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) ভারতের সেরা ব্যাংক হিসেবে দেখছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স। সাম্প্রতিক সময়ে রিটেইল খাতের পরিবর্তে করপোরেট খাতে অর্থায়নে মনোযোগ বাড়িয়েছে ব্যাংকটি। এ বিষয়ে গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে বলা হয়, গত বছর এসবিআইর সার্বিক ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ। ব্যাংকটির মোট ঋণ বিতরণে একসময় তুলনামূলক অনিরাপদ রিটেইল খাতের অংশ ছিল ৩০-৩৩ শতাংশ। গত বছর তা ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয় ব্যাংকটি। এর পরিবর্তে মোট ঋণ বিতরণে করপোরেট ঋণের অংশকে আরো শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে এসবিআই। নন পারফরমিং লোনের (এনপিএল) হার ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও বেশ সফলতা দেখিয়েছে ব্যাংকটি। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি মোট সম্পদের বিপরীতের এনপিএলের অনুপাত (গ্রস নন পারফরমিং অ্যাসেটস রেশিও) ৭২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে ২ দশমিক ৪২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
পাকিস্তানের চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ২০২৩ সালে ইতিহাসের সর্বোচ্চ মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে দেশটির হাবিব ব্যাংক। পাকিস্তানের সবচেয়ে পুরনো এ বাণিজ্যিক ব্যাংক ২০২৩ সালে মুনাফা করেছে ৫ হাজার ৭৮০ কোটি পাকিস্তানি রুপি (প্রায় ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার)। এ সময় মুনাফায় ৬৮ শতাংশ উল্লম্ফন দেখেছে ব্যাংকটি। আর ব্যাংকটি সম্পদ ও আমানত উভয় খাতেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলংকা। দেশটির এ অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তনের অন্যতম অংশীদার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন (সিবিসি)। ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, সিবিসির হলো শ্রীলংকায় প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে অগ্রসর, উদ্ভাবননির্ভর ও গ্রাহকবান্ধব আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এ বক্তব্য নিয়ে গ্লোবাল ফাইন্যান্স বলছে, দেশটির গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মধ্যে বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হলেও বর্তমানে সিবিসি নিজেকে এ পথে ধরে রাখতে পেরেছে। ২০২৩ সালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজিটাল ইকোসিস্টেম নির্মাণে কমার্শিয়াল ব্যাংক লিপ গ্লোবাললিংকার নামে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর একটি পণ্য উদ্ভাবন করে ব্যাংকটি। একই সময়ে ব্যাংকটি শ্রীলংকার আমানত ও ঋণের বাজারে বৃহত্তম অংশটি নিজের জন্য নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্মাণ খাতে গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে নিজের ইএসজি (এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স) ফুটপ্রিন্টও শক্তিশালী করেছে।
নেপালের অভ্যন্তরে গ্লোবাল আইএমই ব্যাংকের (জিআইবি) মোট গ্রাহক সংখ্যা ৪৬ লাখ। দেশটির রিটেইল ও এসএমই খাতে মোট ঋণপ্রবাহের ৫৫ শতাংশের জোগান দেয় ব্যাংকটি। জলবিদ্যুৎ, ম্যানুফ্যাকচারিং, টেক্সটাইল, সেবা, এভিয়েশন, রফতানি, ট্রেডিং ও মাইক্রোফাইন্যান্সে বিনিয়োগে এ পর্যন্ত বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে ব্যাংকটি। সেন্ট্রাল রিনিউয়েবল এনার্জি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হওয়া প্রথম ব্যাংক জিআইবি। এছাড়া নেপালের দুর্যোগপ্রবণ পশ্চিমাঞ্চলে ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে নিজের ইএসজি ক্রিডেনশিয়ালকে আরো শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে জিআইবি।