আইসিসি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৪

ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুভসূচনা অভিষেকে যুক্তরাষ্ট্রের চমক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

৯৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে যুক্তরাষ্ট্রকে জেতানোর আনন্দ অ্যারন জোন্সের ছবি: এপি
Default Image

ঘরের মাঠে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শুভসূচনা করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে গতকাল নবাগত পাপুয়া নিউগিনিকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ক্যারিবীয়রা। পাপুয়া নিউগিনি ৮ উইকেটে ১৩৬ রানের মাঝারি পুঁজি নিয়েও ৯৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে চোখ রাঙাচ্ছিল স্বাগতিকদের। চাপের মুখে ষষ্ঠ উইকেটে রোস্টন চেজ ও আন্দ্রে রাসেল ১৮ বলে ৪০ রান যোগ করে বড় অঘটন থেকে বাঁচিয়েছেন বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের। শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ৩১ রানের। চেজের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৪৮তম ওভার থেকে ১৮ রান তুলে নিয়ে সমীকরণটা সহজ করে ফেলে দুবারের সাবেক বিশ্বজয়ীরা।

এর আগে আইসিসি র‍্যাংকিংয়ের ১৮তম দল যুক্তরাষ্ট্র ও ২৩তম কানাডার ম্যাচ দিয়ে গতকাল পর্দা ওঠে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের। নিচের সারির দুটি দলের খেলা বলে যারা টিভির পর্দায় চোখ রাখেননি, তারা নিশ্চয়ই এখন আফসোসই করছেন! রান-বন্যার এই ম্যাচে কানাডার বোলারদের ওপর রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ৭ উইকেটে জিতিয়েছেন দলটির সহ-অধিনায়ক অ্যারন জোন্স। ৪০ বলে ৯৪ রান করে দলকে জেতানোর পথে ব্যক্তিগত ও দলীয় একগুচ্ছ রেকর্ড গড়েছেন জোন্স ও তার সতীর্থ আন্দ্রিয়াস গুস। 

দুই দলেরই এটা প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। এ ম্যাচে ৫ উইকেটে ১৯৪ রান তুলে নিশ্চিতভাবেই জয়ের প্রহর গুনছিল ম্যাপল লিফার্সরা। তবে তাদের স্বপ্ন চূর্ণ হলো জোন্স-গুসের ব্যাটে। শূন্য রানে স্টিভেন টেইলর ও ৪২ রানে মোনাঙ্ক প্যাটেলের উইকেট হারানোর পরও শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট ও ১৪ বল হাতে রেখে জিতেছে আসরের সহস্বাগতিকরা। এ দুজন তৃতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ১৩১ রান তুলে অভাবনীয় একটি জয় এনে দেন যুক্তরাষ্ট্রকে। এক পর্যায়ে ৭২ বলে ১৪৭ রানের প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, অথচ তারা সেই রান তুলে নিয়েছে ৫৮ বলে। 

জোন্স ও গুসের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং প্রদর্শনীতে বিফলেই যায় নভনীত ধালিওয়াল (৪৪ বলে ৬১) ও নিকোলাস কির্তনের (৩১ বলে ৫১) ইনিংস দুটি।     

দলকে জেতানোর পথে অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন জোন্স ও গুস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান তাড়ায় এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৩০ রান তুলে জিতে রেকর্ড গড়েছিল ইংল্যান্ড। ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২ উইকেটে ২০৮ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর পরেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্কোরটা (১৯৭/৩)। 

নারী ও পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড গড়লেন জোন্স। সপ্তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামা জোন্স শুরুটা ধীরেই করেন। তিনি নবম ওভারে প্রথম ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ডানহাতি ব্যাটার এরপর ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। কানাডার সব প্রতিরোধ তিনি গুঁড়িয়ে দেন। পেসার ও স্পিনারদের বল সমানভাবে মাঠের বাইরে পাঠাতে থাকেন। ১০ ছক্কায় ছুঁয়েছেন ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপ আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্রিস গেইলের ১০ ছক্কার রেকর্ড। যদিও গেইলের ১১ ছক্কার রেকর্ডটা এখনো এক নম্বরেই থাকছে। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১ ছক্কায় ৪৮ বলে ১০০ রান করেন তিনি। ওই ম্যাচে ১৮৩ রানের টার্গেট তাড়া করে জিতে যায় ক্যারিবীয়রা।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে ১৩১ রান করেছেন গুস ও জোন্স। এটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দ্বিতীয় সেরা জুটি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ইংল্যান্ডের অ্যালেক্স হেলস ও এউইন মরগানের গড়া। ২০১৪ সালের আসরে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৫২ রান তুলেছিলেন দুজন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয় সেরা জুটির রেকর্ড হলেও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এটাই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জুটি। গুস ও জোন্স টপকে গেছেন সুশান্ত মোদানি ও গজানন্দ সিংয়ের ১১০ রানের জুটির রেকর্ড। ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এ রান তুলেছিলেন মোদানি ও গজানন্দ। ৪২ বলে ১০০ রান তুলেছেন জোন্স ও গুস, এটাও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্রুততম শতরানের জুটি। মাত্র ২২ বলে ফিফটি করেছেন জোন্স, যা যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম।

যুক্তরাষ্ট্রের এ জয় যে মোটেও ফ্লুক নয়, তা দলটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সই বলে দেবে। বিশ্বকাপের আগে কানাডাকে ৪-০তে ও বাংলাদেশকে ২-১-এ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে তারা। সেই ফর্মটা টেনে এনে এবার বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত সূচনা পেল স্টুয়ার্ট লর দল।

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে প্রথম দিনের সবটুকু আলো কেড়ে নেয়া জোন্স জয় শেষে বলেন, ‘দ্বৈরথটা পুরনো। জানতাম, কানাডা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। তবে এটাও ঠিক, আমাদের ব্যাটিং শক্তির গভীরতা থেকে জানি, ২০০ রান তাড়া করেও আমরা জিততে পারি। এখানে আউটফিল্ড ও পিচ আমাদের সাহায্য করেছে। আমি আমার প্রক্রিয়াটি ঠিক রেখে ব্যাটিং করেছি। আমি নিজের পাওয়ার হিটিংও খুব উপভোগ করি। দল চাপে থাকার সময়ই আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। কারণ এ সময় নিজের সেরাটা বেরিয়ে আসে।’       

নিউইয়র্কে আজ মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা: নিউইয়র্কে নবনির্মিত নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ প্রথমবারের মতো নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ মাঠে গড়াবে। ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকা। ম্যাচটি শুরু হবে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ও বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। 

নিউইয়র্কে আইসিসি র‍্যাংকিংয়ের সাত ও আট নম্বর দলের লড়াই আজ। প্রোটিয়ারা সদ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এ পরাজয়ে র‍্যাংকিংয়ে তিন ধাপ অবনমন ঘটেছে তাদের। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই তারা হেরেছে। অন্যদিকে, শ্রীলংকা সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটি জিতেছে। তারা সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশের সিলেটে। মার্চে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১-এ জিতে নেয় সিংহলিজরা। 

তবে ফর্ম যা-ই হোক না কেন, বিশ্বকাপের মঞ্চে জ্বলে ওঠার মতো রসদ দুই দলেরই আছে। নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরটি রাঙাতে মরিয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই দল। সিংহলিজরা ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আসরে শিরোপা জয় করে। যদিও প্রোটিয়ারা এখনো শিরোপার নাগাল পায়নি।      

নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এ মাঠের উইকেটটি ড্রপ-ইন, যা অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে নেয়া হয়েছে। কাজেই কিছুটা বাড়তি গতি ও বাউন্স পাবেন পেস বোলাররা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, দিনের আলোয় হতে যাওয়া এ ম্যাচে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম। তবে কিছু মেঘের আনাগোনা থাকতে পারে।

আজ সকালে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হবে ওমান-নামিবিয়া। ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন